শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কিছু মিল রয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আমরা কয়েকটি বিষয় মিল দেখতে পারছি। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। যার প্রভাব ইতিমধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে।
আমরা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এই সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে। তারা নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমদানি করা গ্যাসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখন একটা বড় রকমের ক্রাইসিস শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। '
তিনি বলেন, 'সার কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পোশাক কারাখানাগুলো অনেকে বিপদে পড়েছে গ্যাস না পাওয়ার কারণে। ফলে প্রতিযোগিতার মধ্যে বেকায়দার মধ্যে পড়েছে। অন্য শিল্প-কারখানাগুলো জ্বালানি সংকটে পড়েছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বৈদেশিক মজুদের পরিমাণ নিচের দিকে যাচ্ছে, রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার মূল ক্রাইসিস ছিল রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় গিয়েছে। '
ফখরুল বলেন, 'সরকার এমনভাবে প্রতারণা করে যে, রিজার্ভ ৪২ বিলিয়নের কথা বলে। এর মধ্যে সাড়ে সাত বিলিয়ন এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের নামে তারা এ দেশের যারা রপ্তানি করে তাদেরকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দিয়েছে। এই টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই। রপ্তানি কমে আসছে, উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে। ফলে ক্রাইসিসগুলো এখন গভীর হচ্ছে। সে জন্য আমরা আশঙ্কা করছি এখানে শ্রীলঙ্কার মতো একটা অবস্থা তৈরি হতে পারে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। '
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওভারসিজ করসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ওকাব) ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমাদের সাজেশন একটাই―রিজাইন অ্যান্ড গিভ ইলেকশন। নির্বাচন দাও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচিত সরকারই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই সরকার যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত, তারা দুর্নীতির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তারা কোনো দিনই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। '
দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "২০১৮ সালে আমরা কখন নির্বাচনে গিয়েছিলাম? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। সেখানে সেই আলোচনায় উনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রতিশ্রুতি করেছেন এবং তিনি এ কথাও বলেছিলেন, 'আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি যে, নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে, সেই দিন থেকে কেউ অ্যারেস্ট হবে না ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, কোনোভাবে বাধা দেওয়া হবে না। ' আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থেই সমস্ত দল একমত হয়েই সেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেখ হাসিনা তার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তিনি কয়েক দিন পর থেকেই ধড়পাকড় শুরু করেছিলেন এবং যত রকমের নির্যাতন-নিপীড়ন করা দরকার বিরোধী দলের ওপর তিনি তাই করেছিলেন। আমাদের ১৯ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কোর্টের রায় পর্যন্ত প্রভাবিত করা হয়েছিল এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করা হয়েছিল। "
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এখানে জহিরউদ্দিন স্বপন ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি আছেন। তারা ঘর থেকে বেরোতে পারেননি ক্যাম্পেইন করার জন্য। আমার বাসার সামনে ঠাকুরগাঁওয়ে দুই পাশে দুইটা মাইক্রোবাস নিয়ে ডিবি-নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন অপেক্ষা করে। যেই বাসায় ঢুকছে তাকে তুলছিল আর যে বাসা থেকে বেরোচ্ছিল তাকে তুলছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, র্যাব, সেনাবাহিনী সমবেত প্রচেষ্টায় তারা বিরোধী দলকে সেদিন নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি। যার ফলে সেই নির্বাচনে কোনো ফলাফল হয়নি। '
মিট দ্য প্রেসের অনুষ্ঠানে ওকাবের আহ্বায়ক বিবিসির সংবাদদাতা কাদির কল্লোল ও সদস্যসচিব জার্মান নিউজ এজেন্সির (ডিপিএ) সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম মিঠুর সঞ্চালনায় এতে ওকাবের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফরিদ আহমেদ মূল মঞ্চে ছিলেন। মিট দ্য ওকাব অনুষ্ঠানে বিএনপির মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী অ্যানি ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
এ জাতীয় আরো খবর..