আগামীকাল রবিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে শেষ সময়ে জমে উঠেছে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে কোরবানির পশুর হাটগুলোয় বাড়তে থাকে বেচাকেনা। হাটে বিপুলসংখ্যক ক্রেতার উপস্থিতির পাশাপাশি গরু বিক্রি করতে পেরে খামারি ও ব্যবসায়ীরা খুশি।
তবে এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা খুশি নয়।
রাজধানীর সাঈদনগর কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা গরু পছন্দের পর দরদাম করতে বেশি সময় নিচ্ছে না। নিজেদের বাজেটের কাছাকাছি হলেই কিনে নিচ্ছে কাঙ্ক্ষিত পশুটি। সাঈদনগর হাটে ক্রেতার ভিড়ের মধ্যে কথা হয় বাড্ডা পোস্ট অফিস গলির বাসিন্দা মাহতাব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরু কিনে ফেলেছি। মাঝারি আকারের একটি গরু এক লাখ ৮০ হাজার টাকা চেয়েছিল। দরদাম করে ৯৫ হাজার টাকায় কিনলাম। এর আগেও দুই দিন বাজারে এসেছিলাম। তবে মনমতো হয়নি। ’
হাসমত উল্লাহ নামের আরেক ক্রেতা জানান, তিনি আড়াই ঘণ্টা ঘুরেও সাধ্যের মধ্যে গরু পাচ্ছেন না। অপেক্ষা করেছিলেন দাম কিছু কমার। তবে ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না। ফলে হাজারীবাগের পশুর হাটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
হাটের খামারি ও ব্যাপারীরা বলছেন, তাঁরা দাম বেশি চাচ্ছেন না। যে দামে বিক্রি করলে মোটামুটি লাভ হবে, সেটাই চাচ্ছেন। জিয়াউর রহমান রাসেল নামে বনশ্রীর এক ক্রেতা বলেন, ‘সকাল থেকে শতাধিক গরু দরদাম করেছি। সবাই গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দাম হাঁকছে। তাদের চাওয়া অনুযায়ী কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখনো দেখছি। ’
হাটের মাঝখানে রাখা হয়েছে ছাগল। রামপুরা এলাকার বাসিন্দা সোলাইমান সেলিম বলেন, ‘ভেবেছিলাম ছোট দেখে একটা গরু কিনে কোরবানি করব। কিন্তু ছোট গরুরও অনেক দাম। তাই কোরবানির জন্য এবার সুন্দর দেখে একটা ছাগল কিনে নিলাম। ’
খামারি ও ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর বিপুল চাহিদা থাকলেও বড় গরু তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। হাট ঘুরে দেখা গেল, যেখানে বড় গরু রাখা হয়েছে সেখানে লোকজনের উপস্থিতি কম। ফলে বিক্রেতারা হতাশ। তবে আশা ছাড়ছেন না।
কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে প্রায় ১৩ মণ ওজনের গরু নিয়ে আসা খামারি মামুন মিয়া বলেন, ‘আমার গরুর নাম রাখছি মধু। ওজন প্রায় ১৩ মণ। চার বছর ধরে গরুটা বড় করছি। দামটা একটু ভালো পাওয়া উচিত। কিন্তু এখন দেখছি উল্টো। ক্রেতারা ঠিকমতো দামই বলছে না। দেখি শেষমেশ কী হয়। ’
একই কথা বলেছেন জামালপুরের ঢালুর চর থেকে ‘রাজাবাবু’ ও ‘মাস্টারবাবু’ নামের দুটি বড় গরু নিয়ে আসা খামারি হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, ‘অন্যবার দেখেছি অনেকে বড় গরু কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এবার চিত্র ভিন্ন। কী যে হবে, কেউ দাম পর্যন্ত জিজ্ঞেস করছে না!’
রাজধানীর মেরাদিয়া পশুর হাটেও গতকাল সকাল থেকে কোরবানির পশুর জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ওই হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বিক্রিও বাড়ছে। ক্রেতারা দাম বেশির অভিযোগ করলেও বিক্রেতারা বলছেন অন্য কথা। তাঁরা বলছেন, পশুখাদ্যসহ সব জিনিসের দাম বাড়ায় গরুর দামও এ বছর বেড়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে ২০টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন খামারি কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমি রমজান মাসে গরুগুলো কিনেছিলাম। চার দিন হলো হাটে এসেছি। বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকাল মিলিয়ে পাঁচটি গরু বিক্রি করেছি। আমার সবচেয়ে বড় গরুটি এক লাখ ৫০ হাজার টাকায় তিন মাস আগে কিনেছিলাম। তিন মাস খাওয়ানোর পর এটিকে এক লাখ ৮০ হাজারে বিক্রির কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু শেষে এক লাখ ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। ’
পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ ছাগলের হাট : রাজধানীর নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু বিক্রির বিষয়ে দুই সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে ভ্রাম্যমাণ ছাগল বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য লক্ষ করা গেছে। বিভিন্ন এলাকার চার রাস্তার মোড়, স্কুলের মাঠের পাশে খুঁটি গেড়েছেন তাঁরা।
লালবাগ রহমত উল্লাহ স্কুলের সামনে কথা হয় আব্দুল হাকিম নামের এক ভ্রাম্যমাণ ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাটে গেলে ঠিক দাম পাই না, তাই মহল্লায় নিয়ে এলাম একটু ভালো দাম পাওয়ার জন্য।
এ জাতীয় আরো খবর..