×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-০৬
  • ৭৩ বার পঠিত
রোলস রয়েলস ব্র্যান্ডের সম্পূর্ণ নতুন একটি দামি গাড়ি শুল্কায়ন না করেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করে নিয়েছেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের এক গার্মেন্টের মালিক বাংলাদেশি শরীফ জহির। বাংলাদেশ-হংকং যৌথ মালিকানার ‘জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস’ নামের প্রতিষ্ঠানের ওই মালিক শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে এই গাড়ি আমদানি করেছেন। আর শুল্ক পরিশোধ না করেই বন্দর থেকে ছাড় নিয়ে ব্যবহার শুরু করেছেন।

গাড়িটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় না নেওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই নজর রাখছিলেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা।

কিন্তু তাদের অগোচরেই গাড়িটি ছাড় পেয়ে যায় বন্দর থেকে। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের ছেলে নিজের ফেসবুক পেজে ছবিসহ গাড়িটি পোস্ট করলে বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। এর পরই শুল্ক গোয়েন্দা দল গত ৪ জুলাই ঢাকার বারিধারায় ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গাড়িটি আটক করেন। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ পায় আজ বুধবার বিকেলে।
যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটির বাজারমূল্য ২৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশে এই ব্র্যান্ডের হাতে গোনা গাড়ি ব্যবহার করেন মাত্র কয়েকজন। স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল ধরনের এ গাড়ি উৎপাদনের সাল ২০২১। মডেলের নাম কুলিনান এসইউভি আর এই গাড়িটি ছয় হাজার ৭৫০ সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম সুলতান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গাড়িটি চট্টগ্রাম বন্দরের এসেছে গত এপ্রিলে। চালানটি খালাসের জন্য কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি জমা হয় ২৭ এপ্রিল ২০২২ সালে। এর পর থেকেই মূলত আমরা নজর রাখছিলাম; কারণ আগে থেকেই আমাদের কাছে এ বিষয়ে গোপন তথ্য ছিল। ’

তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস পড়ে থাকার পর আমরা খোঁজ নিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে খবর এলো গাড়িটি বন্দর থেকে ছাড় করে ঢাকার বারিধারার এক বাসায় লুকানো আছে। কিন্তু কাস্টমসে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল বিল অব এন্ট্রি জমা হয়েছে ঠিকই কিন্তু শুল্কায়ন পরিশোধ হয়নি। ’

শুল্কায়ন পরিশোধ ছাড়া গাড়িটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কিভাবে ছাড় পেল সেটি নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে সেটি বন্দর থেকে ছাড় করা হয়েছে। আর গাড়িটি কখন বন্দর থেকে ছাড় নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের ১/২ তারিখের মধ্যে ছাড় পেয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়িগুলোর শুল্কায়ন হয় চট্টগ্রাম কাস্টমসের ৮বি সেকশনে। আবার এই গাড়িটি যেহেতু ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের নামেই আনা হয়েছে সে জন্য ইপিজেড কাস্টমস থেকেও অনুমোদন নিতে হয়। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গাড়িটির বিল অব এন্ট্রি জমা পড়েছে ঠিকই কিন্তু অ্যাসেসমেন্ট বা শুল্ক পরিশোধের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। সেটি শেষ না করাটা বিধিসম্মত হয়নি। আর কিভাবে আমদানিকারক গাড়িটি ছাড় নিয়েছেন সেটিই এখন তদন্তের বিষয়। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুল্ক গোয়েন্দা দলের দলের সিজার লিস্ট পেলে রাজস্ব বোর্ডের কাছে আইনি মতামত চাইব। এর পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। ’

শুল্ক গোয়েন্দা দলের অনুসন্ধান বলছে, গাড়িটি শুল্কমুক্ত সুবিধার নামে আমদানি হয়েছে। আর বিল অব এন্ট্রিতেই এসআরও/১০১-এর সিপিসি ১৭০ ধারা মতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার উল্লেখ আছে। কিন্তু এই ধারার অপব্যবহার করেছে আমদানিকারক জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস। কারণ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকারক এ ধরনের গাড়িতে সর্বোচ্চ দুই হাজার সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি (সিসি)র গাড়ি আনতে পারবেন। বাস্তবে গাড়িটি হচ্ছে ছয় হাজার ৭৫০ সিসির। ফলে এখানে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

অভিযানে নেতৃত্বে থাকা শুল্ক গোয়েন্দা দলের যুগ্ম পরিচালক মো. শামসুল আরেফিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানিকারক বে-আইনিভাবে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই গাড়িটি গ্যারেজে লুকিয়ে রেখে শুল্ক আইনের বিধান ভঙ্গ করেছেন। এ ক্ষেত্রে চোরাচালান হিসেবে গণ্য হওয়ার অপরাধ হয়েছে। জব্দ করা গাড়িটি ঢাকা কাস্টম হাউসের শুল্ক গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে। ’

তিনি বলেন, আটককৃত গাড়িটি দুই হাজার সিসির বেশি হওয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত হবে না। সে হিসাবে অন্তত ২৪ কোটি টাকার রাজস্বহানি হবে সরকারের। এ বিষয়ে তদন্তের পরই আরো নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে গাড়িটির আমদানিকারক অনন্ত গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহিরকে ফোন দিলে সাড়া না দেওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat