×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-০৩
  • ৭০ বার পঠিত
এবারের ঈদ যাত্রায় মহাসড়কগুলোতে স্বস্তির আভাস ও ভোগান্তির শঙ্কা দুই-ই আছে। তবে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করার আশঙ্কা কম। এবার দক্ষিণের যাত্রীদের ফেরিঘাটে হয়তো দীর্ঘ গাড়ির সারিতে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। তবে সড়কে টোল প্লাজায় সেই সারি সৃষ্টি হতে পারে।

মহাসড়কগুলোর মধ্যে মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্টগ্রাম মহাসড়ক। তবে উত্তরাঞ্চলের পথে ভোগড়া থেকে চান্দিনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অংশ দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। তাই এই অংশ নিয়ে নতুন করে ভাবছে সড়ক ও মহাসড়ক অধিদপ্তর।আবার সড়কপথে ফেরিঘাটে গাড়ির চাপ এখন কম থাকলেও ঈদ যাত্রার জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

গত ঈদুল ফিতরে মহাসড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হলেও শেষ পর্যন্ত স্বস্তি নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছেছে মানুষ। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল মহাসড়কে অতিরিক্ত মোটরসাইকেলের ব্যবহার ও বাস কম থাকা। ফলে রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা ছিল। এতে বাসের ব্যবসা কম হয়েছে। আবার মোটরসাইকেলের কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছিল। তাই এবারের ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার বিষয়টি সামনে রেখে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এরপর সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরও জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের প্রস্তাব করেছে। তবে অনেকে বলছেন, বাসের ব্যবসা চাঙ্গা করতেই মোটরসাইকেল বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ রবিবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে ঈদ যাত্রার প্রস্তুতিমূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠক থেকে মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার কথা। সেই সঙ্গে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঈদের আগের তিন দিন ও পরের দুই দিন পশুবাহী যান চলাচল বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সওজ সূত্র বলেছে, মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে কঠোর বিধি-নিষেধ হয়তো আসবে না। তবে ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো অনেক দূরের পথে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহ করা হবে। যদিও মোটরসাইকেল চলা না চলা নিয়ে বাস ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যদিও মোটরসাইকেলে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটছে, তবু সরকার তো মোটরসাইকেল বন্ধে নির্দেশ দেয়নি। গত ঈদে করোনার কারণে বাসের ব্যবসা কিছুটা খারাপ গেছে। এবার আমরা পুরো প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি যাত্রী ভালো হবে। ’

সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ‘গত ঈদের চেয়ে এবারের প্রস্তুতি আরো অনেক ভালো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে আলাদা একটা সুবিধা এবার পাওয়া যাবে। যেসব জায়গায় যানজট হতে পারে সেসব জায়গা প্রশস্ত করা হচ্ছে। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করবে। গার্মেন্ট আগে ছুটি হলে ভালো হবে। রাস্তায় পশুর হাট বসানো যাবে না। ’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ায় মৌচাকের তেলিরচালা থেকে সূত্রাপুর বোর্ডঘর পর্যন্ত এবার ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা কম। তবে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহন এলোমেলো করে রাখলে ভোগান্তি এড়ানো যাবে না। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে এ সড়কে যানবাহনের চাপ কিছুটা কম থাকবে। তাই যাত্রীদের বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা নেই।

সওজের উপব্যবস্থাপক আব্দুল আহাদ বলেন, ঈদে সড়কের কারণে ঘরমুখো মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হবে না। আগে চন্দ্রা ও সফিপুর বাজারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো। এখন চার লেনের সড়কের কাজ প্রায় শেষ। তা ছাড়া কালিয়াকৈরের সফিপুর ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ার কারণে ঈদে ভোগান্তি হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।

এই মহাসড়কে যাত্রা স্বস্তির হবে বলে আশ্বাস দিলেন সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠানও। তিনি বললেন, চন্দ্রা মোড়ে যে বাস কাউন্টারগুলো আছে সেগুলো পেছনের দিকে নেওয়া হবে। ওই জায়গা থেকে সড়ক চার লেনের হয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রা মোড়টা স্বাভাবিক হয়ে গেলে ওই পথে আর সমস্যা হবে না।

স্বস্তি দেবে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঈদসহ যেকোনো উৎসবের ছুটিতে যানজট এবং ভোগান্তি নিয়মিত হতো। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরে অতীতের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। মানুষ যানজটমুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। তাই এবারের ঈদ যাত্রায় এই মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা কম। মিলতে পারে স্বস্তি।

জানা যায়, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। মির্জাপুরের গোড়াইয়ে ফ্লাইওভার চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এ মহাসড়কে প্রায় ২৩ জেলার যান চলাচল করে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেন সড়কের কারণে দ্রুত চলে আসে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। আর সেতুগুলোও দুই লেনের। যানগুলো এলেঙ্গা পর্যন্ত এসে ধীরগতি হয়ে যায় দুই লেনের মুখে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সেতুতে টোল আদায়ে ধীরগতির কারণেও যানজট লেগে যায়।

মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চার লেনের সুবিধার কারণে যানবাহন দ্রুতগতিতে চলাচল করছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে মহাসড়কের ময়মনসিংহ লিংক রোড সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এলেঙ্গা-ভূঞাপুর লিংক রোড গত ঈদেই প্রসারিত করা হয়েছে। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্বর দিয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা মহাসড়কে যানবাহন উঠবে। গত ঈদেও এটা করা হয়েছিল। এতে সুফল পাওয়া গেছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে প্রতিদিনই যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। কখনো অবৈধ পার্কিং আবার কখনো সওজের মহাসড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। এতে এক লেন বন্ধ রাখায় যানজট হচ্ছে। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট, শীতলপুর, সোনাইছড়ি ও কুমিরা এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন কনটেইনার ডিপোতে প্রতিদিন হাজার হাজার লং ভেইকল কনটেইনার নিয়ে আসা-যাওয়া করে। এসব ডিপো মহাসড়কের সঙ্গে অবস্থিত। কিন্তু এই যানজট নিরসনে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেনি হাইওয়ে পুলিশ।

জানতে চাইলে সওজের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘যানজট হলেও আমাদের সড়ক সংস্কারকাজ করতে হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সড়কের বেশির ভাগ অংশই এখন সংস্কার হয়েছে। অবশিষ্ট অংশের কাজ চলছে। ঈদের আগে কয়েক দিন কাজ বন্ধ রাখা হবে। আবার ঈদের পর কাজ হবে। কিন্তু সড়ক এখন অনেক ভালো থাকায় ঈদে কোনো যানজট হবে না। ’

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ককে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। ঢাকা থেকে বেরিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ওই মহাসড়কে ঢুকবে ওই অঞ্চলের মানুষ। সেতু অতিক্রম করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার সড়কে ২১ জেলার সব যানবাহনের গতি থাকে প্রায় একই রকম। কিন্তু ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ে শেষে বাম দিকে বাঁক নেওয়া যানবাহনগুলোর গতি কমে যাবে। যানবাহনগুলোকে তখন মাত্র ২৪ ফুট সড়কে চলতে হয়।

তবে ওই মহাসড়কে ঝামেলা হবে না বলে মনে করেন সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু পার হওয়ার পর গাড়িগুলো তিন পথে বিভক্ত হয়ে যাবে। ফলে এই সড়কে তেমন চাপ পড়বে না।

প্রস্তুত ফেরিঘাট

এখন ফেরিঘাটে গাড়ির চাপ কম থাকলেও ঈদে এই চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন ঘাট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই ঈদের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটের বহরে থাকা ফেরি মেরামত, ফেরি বৃদ্ধি এবং জেলা প্রশাসন সব দপ্তরকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠকও সেরেছে। ঘাট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, প্রতিবছরের মতো এবারও এ রুটে ঈদের আগে যানবাহন ও যাত্রীদের ভিড় দেখা দেবে।

এবার ঈদের আগে বিভিন্ন ধরনের ২২টি ফেরি চলাচল করবে। ঈদের কয়েক দিন আগেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার জন্য ঘাটে মোবাইল কোর্ট, পোশাক ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

বিআইডাব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুবেলুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়েছে। তাই ঈদে এই নৌ রুটে তেমন প্রভাব পড়ার কথা নয়। তার পরও আমাদের প্রস্তুতি শেষ করেছি। ’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের চারটি পয়েন্টে ঈদ যাত্রায় যানজটের শিকার হতে পারে যাত্রীরা। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অংশে মহাসড়কের পাশে একাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক পার হয়ে কারখানায় প্রবেশ করতে গিয়ে যানজট লেগে যাচ্ছে। এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের জিন্দা এলাকা থেকে শিংলাবো পর্যন্ত ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা এলাকা থেকে তারাব বিশ্বরোড এলাকা পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।

এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে রয়েছে। মহাসড়কের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখবে।

টোল প্লাজায় যানজট হতে পারে

দক্ষিণের পথে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে এবং পদ্মা সেতুতে টোল প্লাজায় যানজট হতে পারে। কারণ ঈদ যাত্রীর এই পথে যানবাহনের সংখ্যা বেশ বাড়বে। তবে টোল প্লাজার সব বুথ স্বাভাবিক থাকলে ভোগান্তির আশঙ্কা কম।

(তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat