২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চোরাচালান হওয়া ২৮ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা জব্দ করেছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ২০১৯ সালে সীমান্তে বিএসএফের হাতে জব্দ সোনার পরিমাণ ছিল পাঁচ কেজি ৮৮২ গ্রাম। ২০২০ সালে তা ছিল ৩১ কেজি ৭৩৭ গ্রাম ও ২০২১ সালে ছিল ৩০ কেজি ৬০৯ গ্রাম।
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জানুয়ারি থেকে মে) সোনা জব্দের পরিমাণ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
এই পাঁচ মাসে বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩৪ কেজি ৩২৭ গ্রাম সোনা জব্দ করেছে। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানান বিএসএফের দক্ষিণ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এস এস গুলেরিয়া।
কালের কণ্ঠের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন নতুন পদ্ধতিতে চোরাচালান ঠেকানো চ্যালেঞ্জিং। সাধারণত সোনা ভারত থেকে বাংলাদেশে যায় না। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে। এগুলো ঠেকানো বেশ কঠিন। বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তেও সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা জব্দ হয়েছে। বিএসএফের জব্দ করা সোনার পরিমাণও উল্লেখযোগ্য।
ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল গুলেরিয়া বলেন, ‘সাধারণত আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালাই। ধরা যাক, খবর পাওয়া গেল যে পণ্যবাহী একটি ট্রাকে করে সোনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকছে। এক কেজি সোনা একটি মোবাইল সেটের আকারের। কোনো পণ্যের ভেতর হয়তো লুকিয়ে রেখেছে। দেখা গেল, সন্দেহজনক পণ্যবাহী ট্রাকটি তল্লাশি করতে সারা দিন লেগে যায়। ’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দুই পারের মানুষ এত সংযুক্ত যে অনেক সময় কাঁটাতারের এপার থেকে ওপারে চোরাচালানের পণ্য ছুড়ে মারে। ওই পারে ওই চক্রের লোকজন তা সংগ্রহ করে।
গুলেরিয়া বলেন, সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো, কেবল ‘ক্যারিয়ার’ (বহনকারী) ধরা পড়ছেন। যিনি বহন করছেন, তিনি হয়তো কিছু টাকার জন্য চোরাচালানের পণ্য সীমান্ত পার করে দিচ্ছেন। সোনা আসলে কারা পাঠাচ্ছে বা এই চক্র কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তা জানা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোনা চোরাচালানের সামান্যই ধরা পড়ছে বলে মনে করা হয়।
কমেছে গবাদি পশু চোরাচালান
বিএসএফের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গুলেরিয়া বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে গবাদি পশু চোরাচালানের হার আগের চেয়ে কমেছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিএসএফ সাত হাজার ৬০৪টি গবাদি পশু জব্দ করেছে। গত বছর বাংলাদেশে পাচারের সময় বিএসএফের জব্দ গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৩৯০। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৭১৯, ২০১৯ সালে ৭৫ হাজার ২৬ ও ২০১৮ সালে ৬৫ হাজার ১৭৩।
আসন্ন ঈদুল আজহার আগে ভারত থেকে বাংলাদেশে গবাদি পশুর চোরাচালান ঠেকাতে বিএসএফের প্রস্তুতি কতটা জানতে চাইলে গুলেরিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ নিজেই এখন এদিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গবাদি পশু চোরাচালান আগের চেয়ে কমেছে। আমরা সতর্ক আছি।
বাংলাদেশ সীমান্তে জাল ভারতীয় মুদ্রা চোরাচালান অব্যাহত আছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিএসএফ ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ জাল ভারতীয় মুদ্রা জব্দ করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত থেকে। গত বছর তারা দুই কোটি ১৬ লাখ ভারতীয় রুপির বেশি জব্দ করেছে। এ ছাড়া সীমান্তে চোরাই পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার অব্যাহত আছে। বিএসএফ চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সীমান্তে তিন লাখ ৫০ হাজার ৬৮৩ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে।
এ জাতীয় আরো খবর..