×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-২৪
  • ৭০ বার পঠিত
দেশে শিশুশ্রমিক ও পথশিশুদের নিয়ে সঠিক কোনো জরিপ নেই। নেই শিশুশ্রম বন্ধে সচেতনতা। তাদের কাউন্সেলিং কিংবা পুনর্বাসনেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। আর এগুলো একা কারো পক্ষে করা সম্ভব না।

সরকারি-বেসরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে এগুলো করা সম্ভব। বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘আর নয় শিশুশ্রম এবং পথশিশু, চলো স্কুলে যাই’ প্রতিপাদ্য নিয়ে কালের কণ্ঠ ও ওয়ার্ল্ড ভিশন আয়োজিত যৌথ এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভিআইপি সভাকক্ষে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এর সার্বিক আয়োজনে ছিল কালের কণ্ঠ, টঙ্গী আরবান প্রোগ্রাম- ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও আর্টিস্টিক কমিউনিকেশন।

গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। কালের কণ্ঠ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের কর্মকর্তারা ছাড়াও জেলা প্রশাসন, শিক্ষা, সামাজিক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, শিশুসংগঠনসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, শিশুশ্রম কেন হচ্ছে? এটাকে যদি আমরা সবাই মিলে চিহ্নিত করতে পারি তাহলে শিশুশ্রম নিরসন সহজ হবে। এ ছাড়া যেসব কলকারখানা শিশুশ্রমকে উৎসাহিত করে, স্বল্প বেতনে শিশুদের কাজ করায় তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে শিশুশ্রম বন্ধ করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা যদি জনসচেতনতা তৈরি করতে পারি এবং সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে পারি তবে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব।

তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মা শিক্ষিত না থাকায় তারা ভাবে, লেখাপড়া করে কী হবে। তারাও তো লেখাপড়া না করেও তাদের মতো ভালোই আছে। সন্তানরাও পারবে। এভাবে শিশুশ্রম বাড়ছে। এ ধরনের মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।  

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার সংখ্যাটা খুবই কম। যারা কাজ করছে, এতে খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় পথশিশুদের কিছু লেখাপড়া হচ্ছে। কিছু শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কিভাবে পথশিশু থেকে তাদের ফেরানো যায় তার স্থায়ী সমাধানের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। পথশিশুদের মধ্যে কিছু আছে, যাদের বাবা-মা নেই। কিছু আছে পারিবারিক সম্পর্ক ভেঙে বাবা-মা অন্যত্র বিয়ে করেছে। এতে কিছু সন্তান নিরুপায় হয়ে রাস্তায় চলে যায়। এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

গোলটেবিলে বক্তারা বলেন, শিশুশ্রম শিশুদের জন্য একটি বড় ধরনের অভিশাপ। কয়েক বছর আগে করা সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (বিবিএস) জরিপ মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১৭ লাখ শিশুশ্রমিক রয়েছে। এদের মধ্যে ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত। দরিদ্রতা, মা-বাবার সচেতনতা ও আগ্রহের অভাবসহ নানা পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে শিশুশ্রম বন্ধ হচ্ছে না। বিবিএস-এর জরিপ মতে, শহরাঞ্চলের দরিদ্র এলাকায় প্রতি আটজনে একজন শিশুশ্রমে নিয়োজিত। এ ছাড়া দেশে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার সংখ্যা খুবই কম। যারা কাজ করে তারাও খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায়। পথশিশুদের সংখ্যা কত এ ধরনের সরকারি কোনো জরিপ না থাকলেও কারিতাস বাংলাদেশ বলছে, দেশের আনুমানিক সাড়ে ১১ লাখ পথশিশু রয়েছে। এর প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশুর অবস্থান ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে।  

সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ- টঙ্গী এরিয়ার প্রোগ্রাম অফিসার লরেন্স ফলিয়ার সমন্বয়ে গোলটেবিল আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন গাজীপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক আহমেদ বেলাল, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর মঞ্জু মারিয়া পালমা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোমেন মিয়া ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাবেদ আলী, গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা, ভাষা শহীদ কলেজের অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াদুদুর রহমান, আরবান প্রোগ্রাম ওয়ার্ল্ড ভিশনের টেকনিক্যাল ম্যানেজার জোয়ান্না’ডি রোজারিও, টঙ্গী আরবান প্রোগ্রামের টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর জনি রোজারিও, গাজীপুর সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা আবু ইউসুফ, টঙ্গী যুব ফোরামের সভাপতি জনি আহমেদ, টঙ্গী শিশু ফোরামের সহসভাপতি মাহমুদুর রহমানর নাঈম, জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট কোনাবাড়ী থানা কমিটির সভাপতি আশরাফুজ্জামান, জয়দেবপুর কাজীপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ শিল্প গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আসাদুল ইসলাম, ব্লাইন্ড অ্যাডুকেশন রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের গবেষক কামরুন নাহার মিরা প্রমুখ।

এ সময় তারা শ্রম আইন মানা, গাজীপুর থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শিশুশ্রম দূর করা, শিশুদের জন্য বার্ষিক বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা, দরিদ্র পরিবারকে সরকারের বিভিন্ন সহায়তার আওতায় আনা, সরকারি-বেসরকারি ও প্রাইভেট  সেক্টরকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সরকারের শিশুশ্রম নিরসনসংক্রান্ত ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন (এনপিএ) ২০২১-২৫ বাস্তবায়ন করার সুপারিশ জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিং করার জোর দাবি জানান তারা।

বক্তাদের মধ্যে গাজীপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক আহমেদ বেলাল বলেন, ২০১২ ও ১৩ সালের পরে শিশুশ্রমিক সংখ্যার জরিপ নেই। তাই এ জরিপ করার জন্য আহ্বান জানাই। গত বছরও শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা সংক্রান্ত ১২টি মামলা করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি রাখা হয়। আমরা না পারলে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিই। তাই সবার সহযোগিতায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের চেয়ে গাজীপুরে শিশুশ্রমের হার কম।

গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা বলেন, প্রত্যেক শিশু তাদের মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করুক। যেসব শিশু স্কুলে যায় না বা ঝরে পড়ে তাদের স্কুলে নেওয়া কঠিন। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান অনেক সময় খেয়ে না খেয়ে স্কুলে যায়। তাদের জন্য মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যবস্থা কার্যকর করতে সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট কোনাবাড়ী থানা কমিটির সভাপতি মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য। দারিদ্র্য বিমোচন না হলে এটা বন্ধ করা কঠিন। শহরে পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে শ্রম আইন মানা হচ্ছে না। এসব কারখানায় নজরদারি না থাকায় কম বেতনে শিশুশ্রম চলছেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat