×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-২৫
  • ৮৯ বার পঠিত
২৪ জুন, ১৯৮৭। আর্জেন্টিনার রোজারিওতে হোর্হে মেসি ও সেলিয়া মারিয়া কুচিত্তিনির সংসারে তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্মানো ছেলেটাকে এখন পৃথিবী চেনে ‘লিওনেল মেসি’ নামে। ফুটবল যাঁরা দেখেন এবং ভালোবাসেন, (এমনকি যাঁরা দেখেন না কিংবা ভালোবাসেন না) তাঁদের এই নামটার সঙ্গে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।

অনেকের চোখেই তিনি সময়ের সেরা ফুটবলার, অনেকের চোখে তিনি ইতিহাসের সেরাও। ফুটবল খেলে পৃথিবীর মানুষকে এত আনন্দ আর খুব কম জনই দিয়েছেন।
 আজ আরও একটা ২৪ জুন। আজ সেই লিওনেল মেসির ৩৫তম জন্মদিন।
 এই উপলক্ষে মেসির ক্যারিয়ারের ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ফিরে দেখা যাক—

 ১.
নিজ শহর রোজারিওর ছোট্ট ক্লাব আবান্দেরাদো গ্রান্দিওলির হয়ে এক টুর্নামেন্টের ফাইনালে অংশ নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে নিজের বাড়ির বাথরুমে আটকা পড়েছিলেন মেসি। লক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সাহায্যের জন্য চিৎকার করেও যখন ফল হলো না, ছোট্ট মেসি নিজেই জানালা ভেঙে মাঠে চলে যান। শেষ ২০ মিনিটে হ্যাটট্রিক করে দলকে উদ্ধার করেন মেসি, ম্যাচসেরার পুরস্কার হিসেবে পান একটা বাইসাইকেল।
২.
 নিউয়েলসের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ১৯৯৭ সালে পেরুতে ‘কান্তোলাও ফ্রেন্ডশিপ কাপ’ খেলতে গিয়ে করেন ১০ গোল, চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁর দল।



৩.
২০০০ সালে ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় ট্রায়াল। বার্সা মুগ্ধ হওয়ার পর ন্যাপকিন পেপারে সেই বিখ্যাত চুক্তি। লা মেসিয়ায় পথচলা শুরু।

৪.
২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর জোসে মরিনিওর এফসি পোর্তোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ডিফেন্ডার ফের্নান্দো নাভারোর জায়গায় ম্যাচের ৭৬ মিনিটে ১৬ বছর বয়সী মেসিকে বদলি নামান কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড।

৫.
২০০৪ সালে ১৭ বছর ৩ মাস ২২ দিন বয়সে কাতালান ডার্বিতে এসপানিওলের বিপক্ষে বার্সার হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষেক মেসির। এবার পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ডেকোর বদলি নেমে খেলেন শেষ ৯ মিনিট।

৩৫তম জন্মদিনের আগে আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিছু জিততে না পারার আক্ষেপ দূর হয়েছে মেসির , গত জুলাইয়ে ৩৪তম জন্মদিনের কদিন পর জিতেছেন কোপা আমেরিকা 
৩৫তম জন্মদিনের আগে আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিছু জিততে না পারার আক্ষেপ দূর হয়েছে মেসির , গত জুলাইয়ে ৩৪তম জন্মদিনের কদিন পর জিতেছেন কোপা আমেরিকা ছবি: রয়টার্স
৬.
বার্সার জার্সিতে প্রথম গোল। ২০০৪-০৫ মৌসুমে লা লিগায় আলবাসেতের বিপক্ষে স্যামুয়েল ইতোর জায়গায় বদলি নেমে।

৭.
২০০৫ সালে নেদারল্যান্ডসে হওয়া অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। দুটি গোলই করেন মেসি। ৬ গোল করে হন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা, হন সেরা খেলোয়াড়ও।

৮.
আর্জেন্টিনার হয়ে ২০০৮ অলিম্পিক ফুটবলে সোনা জয়। টুর্নামেন্টে ২ গোল করেছিলেন মেসি, করিয়েছিলেন ৩টি।

৯.
১৭ আগস্ট ২০০৫। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে অভিষেক। হাঙ্গেরির বিপক্ষে লিসান্দ্রো লোপেজের বদলি নামার মাত্র ৪৩ সেকেন্ডের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।

১০.
২০০৬ মার্চের প্রথম দিনে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোল। আর্জেন্টিনা সে ম্যাচ হেরে যায় ৩-২ গোলে।

১১.
১৬ জুন ২০০৬। সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ অভিষেক। ম্যাক্সি রদ্রিগেজের বদলি হিসেবে নেমে বিশ্বকাপে পেয়েছিলেন নিজের প্রথম গোল।

If you scored 50 goals a season for 15 years straight, you would retire with 750 goals to your name.

Lionel Messi has scored 769 🤯 pic.twitter.com/eD2lTFTDMt

— ESPN FC (@ESPNFC) June 24, 2022
১২.
ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। ২০০৭ সালের ১০ মার্চে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। ৩-৩ গোলে ড্র ম্যাচ।


১৩.
২০০৭ কোপা দেল রে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে হেতাফের বিপক্ষে পাঁচ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে করা মেসির গোলটা মনে করিয়ে দেয় ম্যারাডোনার ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’কে। বছর তিনেক আগে যেটি বার্সার ইতিহাসের সেরা গোল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

১৪.
৯ জুন, ২০০৭। ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের মতো গোল মেসির। লা লিগায় এসপানিওলের বিপক্ষে।

১৫.
চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে প্রথম গোল। ২০০৯ সালের সে ফাইনালে রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে জিতেছিল মেসির বার্সেলোনা। রিও ফার্দিনান্দের মতো দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে হেডে করা মেসির গোল মুগ্ধতা ছড়ায় এখনো।

🇦🇷 Happy birthday, Lionel Messi 🥳

⏮ Flashback to his performance against Italy in Finalissima 🤩#HBD pic.twitter.com/0UGxf7VvSD

— UEFA EURO 2024 (@EURO2024) June 24, 2022
১৬.
প্রথম ব্যালন ডি’অর জয় ২০০৯ সালে।

১৭.
এক বছরে সম্ভাব্য যতগুলো ট্রফি জেতা যায়, সব কটি জিতে ২০০৯ সালে ইতিহাস গড়ে বার্সেলোনা। ষষ্ঠ শিরোপাটা আসেও মেসির গোলেই, এস্তুদিয়ান্তেসের বিপক্ষে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে।

১৮.
৭ মার্চ, ২০১২। চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ৫ গোল মেসির।

১৯.
২০১২ সালের ২ নভেম্বর প্রথমবারের মতো বাবা হন মেসি। বার্সেলোনার দেক্সেউস ইউনিভার্সিটি হসপিটালে মেসির তখনকার বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর কোলে আসে প্রথম সন্তান থিয়াগো।

২০.
ওসাসুনার বিপক্ষে শুরু, রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে শেষ। এই দুই ম্যাচের আগে ২০১২ সালে মেসি খেলেছিলেন আরও ৬৭টা ম্যাচ। সব মিলিয়ে ৬৯ ম্যাচে ৯১ গোল। বার্সেলোনার হয়ে ৬০ ম্যাচে ৭৯টি, আর্জেন্টিনার হয়ে ৯ ম্যাচে ১২টি।

২১.
২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে লিগ জিতেই অনন্য এক রেকর্ডে নাম লেখান মেসি। ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে ২৪ শিরোপা হয়ে যায়। আর কোনো আর্জেন্টাইন তারকার এর চেয়ে বেশি শিরোপা জেতার রেকর্ড ছিল না।

মেসির গায়ে আর বার্সেলোনার জার্সি দেখা যাবে না, তাঁর ৩৪তম জন্মদিনে এমনটা কে ভেবেছিল! 
মেসির গায়ে আর বার্সেলোনার জার্সি দেখা যাবে না, তাঁর ৩৪তম জন্মদিনে এমনটা কে ভেবেছিল! ছবি: রয়টার্স
২২.
২০১৪ সালে ওসাসুনার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে পলিনো আলকানতারাকে ছাড়িয়ে বার্সার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গোলদাতা হয়ে যান মেসি।

২৩.
একই বছর লিগে সেভিয়াকে ৫-১ গোলে হারানোর পথে হ্যাটট্রিক করেন মেসি। আর সেই তিন গোল করার পথে তেলমো জারাকে পেছনে ফেলে লা লিগার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক হয়ে যান মেসি।

২৪.
২০১৬ সালে গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে সরিয়ে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান মেসি। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে বাতিস্তুতাকে ছাড়ানো সে গোলের ফ্রি-কিকটাও ছিল দর্শনীয়।

২৫.
২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হারের পর অভিমানে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা। দুই মাসের মাথায় সেই ঘোষণা প্রত্যাহার।

৩৫-এ মেসির বার্সা ভিন্ন নতুন ক্লাবে যোগ দেওয়াও দেখল বিশ্ব  
৩৫-এ মেসির বার্সা ভিন্ন নতুন ক্লাবে যোগ দেওয়াও দেখল বিশ্ব ছবি: রয়টার্স
২৬.
ক্যারিয়ারের ৫০০ গোলের রেকর্ডটাও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই করেন মেসি। ২০১৭ সালে রিয়ালের মাঠে গোল করার পর নিজের জার্সি হাতে মেসির উদ্‌যাপনটা কে ভুলবে!

২৭.
১০ বছর একসঙ্গে থাকার পর ২০১৭ সালের ৩০ জুন গাঁটছড়া বাঁধার সিদ্ধান্ত নেন মেসি-আন্তোনেল্লা।

২৮.
২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা আদৌ খেলতে পারে কি না, সন্দেহ ছিল। বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়ার জন্য বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে জিততেই হতো আলবিসেলেস্তিদের। হ্যাটট্রিক করে দলকে বিশ্বকাপে তুলেই ক্ষান্ত হন মেসি।

২৯.
মেসি আর ম্যারাডোনা কি কখনো একসঙ্গে খেলেছেন? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে সেই ২০০৫ সালে। সেবার আর্জেন্টিনা অল স্টারসের হয়ে এই দুজন একসঙ্গে মাঠে নেমেছিলেন। শুধু তা–ই নয়, এ ম্যাচে ছিলেন দিয়েগো সিমিওনে, হুয়ান ভেরন, মার্সেলো গ্যাশার্দোর মতো তারকারাও।

৩০.
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জেতেন ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর। রোনালদোকে টপকে হয়ে যান সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি’অরের মালিক। পরে আরও একটা ব্যালন ডি’অর জিতে নিজেকে নিয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

৩১.
২০২০ সালের আগস্টে ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্সেলোনাকে জানিয়ে দেন, দলে আর থাকতে চান না। সেবার অনেক চেষ্টা করে রেখে দিলেও পরের বছর নিজেদের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই মেসিকে আর ধরে রাখতে পারেনি দলটা, মেসিও পাড়ি জমান পিএসজিতে।

৩২.
২ মে, ২০০৯। এই দিনে রিয়াল মাদ্রিদকে ধসিয়ে দেওয়ার নতুন উপায় খুঁজে বের করেন মেসি ও তৎকালীন কোচ পেপ গার্দিওলা। এর আগে উইংয়ে খেলা মেসি সেবারই প্রথম ‘ফলস নাইন’ পজিশনে খেলা শুরু করেন। মেসির দুর্বোধ্য পজিশনিংয়ে ভ্রান্ত হয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচটা হেরে বসে ৬-২ গোলে।

৩৩.
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ফুটবলার হিসেবে লরিয়াস বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্বের পুরস্কার পান মেসি। তাঁর আগে দলগত খেলার কোনো তারকা এই পুরস্কার পাননি।

৩৪.
২০২১ কোপা আমেরিকা জয়। বড় কোনো শিরোপার জন্য আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের অপেক্ষা শেষ হয়। মেসিও জেতেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম বড় ট্রফি। 

৩৫.
এ মাসের শুরুতেই ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জিতে নেয় লা ফিনালিসিমা। কোপাজয়ী আর্জেন্টিনা ও ইউরোজয়ী ইতালির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের ম্যাচ শেষে হাসে আর্জেন্টিনা, হাসেন মেসি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat