সৌদি আরবের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় নারীদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তালমেলাতে লক্ষ্য স্থির করেছেন তিনি। হাতে নিয়েছেন ‘ভিশন ২০৩০’ প্রকল্প। এর আওতায় নারী স্বাধীনতা, উন্নয়ন আর প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এ কারণেই নারীদের পর্দাপ্রথা থেকে শুরু করে একের পর এক ‘বাধা-বিপত্তি’ অপসারণ শুরু করেছেন ক্রাউন প্রিন্স। সামাজিক সংস্কারের অধীনে মহিলাদের হিজাব পরতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকেই হিজাব শিথিলতা চলে এসেছে সৌদি নারী সমাজে।
কারও কারও মাথা থেকে তো একবারেই উড়ে গেছে ‘হিজাব’ নামের একসময়কার অপরিহার্য পোশাকটি। সেই ‘স্বাধীনতা’র সঙ্গে তালমেলাতে মাথা থেকে উড়ে যাচ্ছে চুলও। সেলুনে গিয়ে ‘বয়কাট’ দিচ্ছেন পেশাজীবী নারীদের কেউ কেউ। এএফপি।
‘বয়কাট’কে পেশাদার নারীদের ‘কাট’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদেরই একজন সৌদি ডাক্তার সাফি (ছদ্মনাম)। মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল তার ঢেউখেলানো কোমল রেশমি চুলগুলো। রিয়াদের একটি সেলুনে গিয়ে হেয়ারড্রেসারকে চুলগুলো কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। ‘বয়কাট’ চুল নিয়ে তৃপ্তিসহ বেরিয়ে এলেন সেলুন থেকে। এটিকে তারা বলতে চান ‘পেশাজীবীদের কাট’। এ ধরনের ‘কাট’ অবাঞ্ছিত পুরুষদের মনোযোগ থেকে রক্ষা করবে বলে মনে করেন সাফি। তিনি বলেন, ‘এই স্টাইলটি একটি ঢালের মতো-যা আমাকে দুষ্ট মানুষের হাত থেকে রক্ষা করতে মনোবল জোগাবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে মধ্য রিয়াদের একটি সেলুনে ‘বয়কাট’-এর চাহিদা বেড়েছে। হেয়ারড্রেসার লামিস জানালেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনের মধ্যে সাত থেকে আটজন গ্রাহক এই স্টাইলে চুল কাটার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘নারীরা শ্রমবাজারে প্রবেশের পর থেকে স্টাইলটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’ লামিস জানান, অনেক মহিলা হিজাব পরেন না বলেই বয়কাটের বিস্তৃতি ঘটছে।
‘বয়কাট’ চুলের ৪১ বছর বয়সি দুই সন্তানের মা আবির মোহাম্মদ পুরুষদের পাশাপাশি চাকরি করেন একটি পোশাকের দোকানে। তিনি বলেন, ‘আমি একজন পেশাজীবী নারী। চুলের যত্ন নেওয়ার সময় পাই না বলেই এই স্টাইলটি আমার পছন্দ হয়েছে।’ রোজ নামের আরেক নারী জানান, ‘বয়কাট আমাকে শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস দেয়। আর তারই ফলে আমি অভিভাবক ছাড়াই যা খুশি তা করতে পারি।’ ‘নারীরা হিজাব আর আবায়া পরবে কি-না, এটা সম্পূর্ণ নারীদের ব্যাপার’- ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ এ কথা বলেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স। তারই ধারাবাহিকতায় হিজাব মাথা থেকে সরে যাওয়ার পর এবার চুল ছাঁটতে শুরু করেছেন সৌদি আরবের নারীরা। এক কথায় ধর্মীয় রক্ষণশীলতার গণ্ডি পেরিয়ে সৌদি নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনত। নারীরা এখন শহরগুলোতে গাড়ি চালাতে পারেন। গাড়ির গ্যারেজেও কাজ করছেন। অবিবাহিত নারীরা পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই হোটেলের থাকার অনুমতি পেয়েছেন আরও দুবছর আগে। কনসার্ট কিংবা ক্রীড়া ইভেন্টেও নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ নয়। পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারেন সৌদি নারীরা।
এ জাতীয় আরো খবর..