বয়স ৯১। তবু যেন বিরাম নেই। নিজের নামের মতোই তরুণ মজুমদার ‘তরুণ’ই রয়ে গেছেন। এই বছর তিনেক আগেও তাঁর সিনেমা ‘ভালোবাসার বাড়ি’ মুক্তি পেয়েছে। পরিচালকের বয়স তখন ‘মাত্র’ ৮৯।
তবে বেশ কিছুদিন ধরেই শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। যকৃতের অসুস্থতা নিয়ে আট দিন ধরে কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরিচালককে রাখা হয়েছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা বা আইসিসিইউতে।
আজ জানা গেল কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তি থাকা তরুণ মজুমদার অত্যন্ত সংকটাপন্ন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে।
আজ সকালে পিজি হাসপাতালে পরিচালককে দেখতে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে গিয়ে তিনি তরুণ মজুমদারের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। ইতিমধ্যে হাসপাতালে তাঁকে দেখে এসেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএম নেতা কান্তি গাঙ্গুলি সহ অন্যান্যরা। তরুণ মজুমদার বাম ঘরানার চলচ্চিত্রকার হিসেবে পরিচিত।
চারবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই পরিচালকের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে পিজি হাসপাতাল। বোর্ডে রয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র ঘোষ, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল, নেফ্রোলজিস্ট অর্পিতা চৌধুরী, সিসিইউ বিশেষজ্ঞ অসীম কণ্ডু প্রমুখ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তরুণ মজুমদার এখন আচ্ছন্নের মধ্যে আছেন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের চিকিৎসকেরা দফায় দফায় তাঁকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি এখন স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না। খাদ্যনালিতে শ্লেস্মা জমেছে। তাঁকে রাইচ টিউব দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। তাঁর কিডনি, হৃদ্যন্ত্রসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও সমস্যা আছে। তবে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন অনেকটা কমে এসেছে। বয়সের কারণে এই মুহূর্তে তাঁকে ডায়ালাইসিসও করা যাচ্ছে না। রক্তে ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়াও বেড়েছে রক্ত চাপও।
ষাট থেকে আশির দশকের মধ্যে একের পর এক সমালোচক প্রশংসিত ছবি উপহার দিয়ে তরুণ মজুমদার হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য এক পরিচালক। বিয়েও করেছিলেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে।
তরুণ মজুমদারের জন্ম ১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি, বাংলাদেশের বগুড়ায়। উত্তম-সুচিত্রার সময়ে ছবি নির্মাণ শুরু করেন তরুণ। পরিচালিত প্রথম ছবি ‘চাওয়া পাওয়া’। ১৯৫৯ সালে উত্তম-সুচিত্রা ও তুলসী চক্রবর্তীকে নিয়ে তৈরি করেছিলেন ছবিটি।
এরপরের ছয় দশকে ছবি বানিয়েছেন ৩৬টি। সর্বশেষ ছবি ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ভালোবাসার বাড়ি’। একই বছর ‘অধিকার’ নামে একটি তথ্যচিত্রও করেছিলেন তিনি।
এ ছাড়া তরুণ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘গণদেবতা’, ‘কাচের স্বর্গ’, ‘যদি জানতেম’, ‘পলাতক’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘মেঘমুক্তি’, ‘বালিকা বধূ’, ‘কুহেলি’, ‘চাঁদের বাড়ি’। তরুণ মজুমদারের ছবিতে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে সন্ধ্যা রায় ও তাপস পালকে। এর মধ্যে সন্ধ্যা করেছেন ২০টি, তাপসকে দেখা গেছে আটটি ছবিতে।
সিনেমার জন্য চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতবার বিএফজেএ পুরস্কার, পাঁচবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ আনন্দলোক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী।
এ জাতীয় আরো খবর..