ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বেশ কিছু গান উৎসাহ-অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তবে যে গানের একাধিক লাইন স্লোগানের মতো ছড়িয়ে গেছে, সেটি ‘শূন্য’ ব্যান্ডের ‘শোনো মহাজন’। এক দশক আগের গানটি যেন পুনর্জন্ম পেল এই বিপ্লবে। তার রেশ ধরে ‘শূন্য’র দলপ্রধান ও ভোকাল ইমরুল করিম এমিলের সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।
পুরনো গানের পুনর্জন্ম
গানের বাণী যখন চিরন্তন হয়, তখন সেটি কালের সীমানা জয় করে। ‘শূন্য’র এই গান তারই নবীন উদাহরণ। ২০১৪ সালে প্রকাশিত ব্যান্ডটির চতুর্থ অ্যালবাম ‘ভাগো’র গান এটি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এটি অন্তর্জালের ভিডিও থেকে মিছিলের স্লোগান, এমনকি দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি হিসেবেও ছড়িয়ে গেছে।
পুরনো গানের পুনর্জন্মে খুবই গর্বিত এমিল ও ‘শূন্য’র সদস্যরা। এমিল বলেন, ‘এই গানের মাধ্যমে আমরাও ছাত্র-জনতার বিপ্লবে অংশ নিতে পেরেছি। অনেকের মন্তব্য দেখেছি, আন্দোলনের সময় যাঁদের হয়তো একটু মন খারাপ ছিল, আমাদের গানটা শুনে তাঁরাও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, অংশ নিয়েছেন প্রতিবাদে। শুধু এবারই নয়, আগেও বিভিন্ন প্রতিবাদ-আন্দোলনে গানটা ব্যবহূত হয়েছে।
যাঁরা গানটিকে এমন ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন, তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
মহাজনের নেপথ্যের গল্প
‘শোনো মহাজন, আমি নয়তো একজন, শোনো মহাজন, আমরা অনেক জন’—এমন কথার গানটি ঠিক কোন প্রেক্ষাপটে রচনা করা হয়েছিল? এমিলের জবাব, ‘নির্দিষ্ট কাউকে মাথায় রেখে গানটি বানানো হয়নি। সাধারণ একটা ভাবনা থেকেই বানানো। একজন ব্যক্তি মানুষ হতে পারে, সরকার হতে পারে, কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা পরিবার হতে পারে। সেখানে যদি কেউ চাপ কিংবা হতাশা অনুভব করে, তার ভাবনার জায়গা থেকেই এই গান।
এটি লিখেছেন শাহান কবন্ধ। তিনি যেমন অনুভব করেছেন, আমরাও গানটি কম্পোজ কিংবা পারফরম করার সময় সে আবেগ অনুভব করেছি। এবারের আন্দোলনে গানটি নতুনভাব অর্থবহ হয়ে উঠেছে দেখে আরো ভালো লাগছে। আরেকজন মানুষের কথা বিশেষভাবে বলতে চাই, তিনি ফুয়াদ আল মুক্তাদির। এই গানের প্রযোজক। গানের মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টসহ সবই তাঁর করা। ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে তখন ছিলাম আমি, শাকের, মাইকেল ও লাবিব। এটা একটা সমন্বিত কাজ। তাই সবার ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ।’
কানাডায় কনসার্ট
‘শূন্য’ এখন অবস্থান করছে দূর দেশ কানাডায়। সেখান থেকেই এমিল জানালেন, দুটি কনসার্টের জন্য এই সফর। কিছু দিন আগে একটি কনসার্ট সম্পন্ন হয়েছে। অন্যটি হবে ১৭ আগস্ট। এমিল বলেন, “কানাডার টরন্টোতে ‘বিজয়ের গান’ থিমে রক ফেস্ট হচ্ছে। এখানে ‘শোনো মহাজন’-এর পাশাপাশি আমাদের অনুপ্রেরণামূলক গানগুলো করব। সম্প্রতি আমরা যে নতুন এক স্বাধীনতা পেয়েছি, সেটার উদযাপনও হবে এই কনসার্টে। কনসার্টে আরো পারফরম করবেন গায়ক তাহসান, ব্যান্ড আরবোভাইরাস, আয়রনক্লেফ, সেক্টর ২.০।”
শূন্যের ব্যস্ততা
২০০৭ সালে গঠিত হয় ব্যান্ডটি। পরের বছরই প্রকাশিত হয় প্রথম অ্যালবাম ‘নতুন স্রোত’। পথচলার লম্বা সময়ে গান প্রকাশ ও কনসার্ট অব্যাহত রেখেছেন ‘শূন্য’র সদস্যরা। এখনকার ব্যস্ততা প্রসঙ্গে এমিল বলেন, ‘১৬ বছরের জার্নিতে আমরা এর আগে পাঁচটা একক অ্যালবাম ও অনেকগুলো সিঙ্গেলস প্রকাশ করেছি। এখন নতুন গান তৈরির চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আবেগ-অনুভূতি ভিন্ন। সেসব আবেগ নিয়ে গান বাঁধার চেষ্টা করছি। অব্যক্ত-অজানা গল্পগুলো গানে গানে তুলে আনতে চাইছি। এর বাইরে দলের সদস্যদের পরিবার, স্ত্রী-সন্তান আছে। সেসব দিকেও মনোযোগ দিতে হচ্ছে। পরিবারের পাশাপাশি যতটা সম্ভব ব্যান্ডে সময় দিচ্ছি।’
ভক্তদের জন্য বার্তা
‘শূন্য’র সর্বশেষ গান ‘কাছে আসার এই গল্পে’ এসেছে দেড় বছর আগে। এরপর বিভিন্ন কনসার্টে পারফরম করলেও নতুন গান প্রকাশ করেনি। এ নিয়ে ভক্তদের কিছুটা আক্ষেপ আছে। তাঁদের উদ্দেশে এমিলের বার্তা, ‘এত বছর ধরে আমাদের গান শোনা এবং সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমরা মিউজিক কখনো বন্ধ করব না। অর্থবহ গান করার চেষ্টা চালিয়ে যাব। এ জন্যই সময় নিয়ে কাজ করছি। এক-দুই বছরে একটা গান প্রকাশ করব। আশা করি শ্রোতারা পাশে থাকবে।’
এ জাতীয় আরো খবর..