আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিন মামলার কার্যক্রমে দুই মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার (১ মে) এ তিন মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক কাজলের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে এ আদেশ দেন বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে কাজলের আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু আদালত তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’
আগামী ২৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানির জন্য তারিখ রাখা হয়েছে বলেও জানান এই আইন কর্মকর্তা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিন মামলায় অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে গত বছরের ৮ নভেম্বর সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন।
অভিযোগ গঠনের সে আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন কাজল। গত ২২ ফেব্রুয়ারি আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি (নট প্রেসড রিজেকটেড) বলে খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। পরে তিন মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আলাদা তিনটি আপিল করেন কাজল; সেসব আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদেশ দিলেন উচ্চ আদালত।
যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেল কারবারে ‘জড়িতদের’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ২০২০ সালের ৯ মার্চ মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে শেরেবাংলানগর থানায় প্রথম মামলাটি দায়ের করেন মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর।
একই ঘটনায় পরদিন হাজারীবাগ থানায় মামলা করেন ওসমান আরা বেলী এবং ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য সুমাইয়া চৌধুরী বন্যা কামরাঙ্গীরচর থানায় আরেকটি মামলা করেন। পরে তিন মামলায়ই শুধু কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
একসময় দৈনিক সমকাল ও বণিক বার্তায় ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা কাজল ‘পক্ষকাল’ নামের একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করছিলেন। মামলা হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ২০২০ সালের ১০ মার্চ বকশিবাজারের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
পরে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অপহরণ মামলা করা হয়। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখালেখির কারণে অজ্ঞাতনামা কেউ তাকে ‘অপহরণ’ করেছে।
প্রায় দুই মাস পর ওই বছরের ২ মে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে কাজলকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় বিজিবি। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়। যশোর থেকে ঢাকায় আনার পর ২০২০ সালের জুনে কাজলকে ঢাকায় এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট কাজলকে জামিন দিলে ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।
এ জাতীয় আরো খবর..