এখন নতুন বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা বাধ্যতামূলক। তা না থাকলে বিদ্যুৎ–সংযোগ মেলে না। বাড়ির নকশা পাস করাতেও রাজউক বা স্থানীয় প্রশাসন টিআইএন দেখতে চায়। কারণ, টিআইএন ছাড়া আপনি বাড়ি করতে পারেন না। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধনের ক্ষেত্রে টিআইএন জমা দেওয়া এখন বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া গাড়ি নিবন্ধন, ফিটনেস নবায়ন—এসব কাজেও টিআইএন লাগে।
কিন্তু আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছর থেকে এই ধরনের সরকারি সেবা নিতে হলে শুধু টিআইএন সনদ জমা দিলেই কাজ হবে না। আপনি বছর শেষে রিটার্ন জমা দিয়েছেন কি না, সেটি দেখাতে হবে। এর প্রমাণ হিসেবে রিটার্ন জমার প্রাপ্তিস্বীকারপত্র জমা দিতে হবে। আসন্ন বাজেটে এই ধরনের সরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমার প্রাপ্তিস্বীকারপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা থাকতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে ৪০ ধরনের সেবা পেতে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক। এর সঙ্গে নতুন বাজেটে সরকারি সেবা পেতে করদাতাকে রিটার্ন জমার প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করার বিধি আসছে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দিতে হয়। অবশ্য ৭৫ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে বছরে ২৫ লাখের মতো রিটার্ন দেন।
দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন লাগে। আবার জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলেও টিআইএন লাগে। এ ছাড়া কয়েক ধরনের ব্যবসা করতে টিআইএন লাগবে। যেমন মুঠোফোন রিচার্জ ব্যবসা, মোবাইল ব্যাংকিং, পরিবেশক এজেন্সি, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস ইত্যাদি। বিশেষ কয়েক শ্রেণির পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদেরও টিআইএন থাকতেই হবে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঋণপত্র (এলসি) খোলা; রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যবসার লাইসেন্স নেওয়া বা তা পুনর্নিবন্ধন; দরপত্র জমা; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ; প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য; কোম্পানির পরিচালক, স্পনসর শেয়ারহোল্ডার ইত্যাদি।
জরিমানা কমছে
আয়কর ও ভ্যাট রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানার পরিমাণ কমছে। মূলত ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা ও প্রতিষ্ঠানকে তাদের আয়-ব্যয় জানানোয় উৎসাহিত করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
বর্তমানে করদাতা রিটার্ন জমা না দিলে বিলম্ব ফি হিসেবে ২ শতাংশ হারে সরল সুদে জরিমানা করা হয়। এটি কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। আবার রিটার্ন না দেওয়ার জন্য ১ হাজার টাকা কিংবা আগের বছরের করের ১০ শতাংশ—যেটি বেশি হবে, তা প্রযোজ্য হয়। সেখানেও পরিবর্তন আসতে পারে।
এ ছাড়া বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন না দিলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আগামী বাজেটে এই জরিমানা অর্ধেকে, অর্থাৎ পাঁচ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হতে পারে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভ্যাট রিটার্ন না দিলে কর্মকর্তারা যখন-তখন ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে থাকেন।
এ জাতীয় আরো খবর..