দেশের সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গন সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনেও ছাত্রদল-ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মারামারি, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কর্মী নাহিদ চৌধুরীর অবস্থা গুরুতর। পরে তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে তারা মিছিল বের করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এদিকে শিশু একাডেমি ও দোয়েল চত্বর এলকায় আগেই অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের মিছিলটি হাইকোর্টের মাজার গেট পেরিয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে অগ্রসর হতে গেলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও রড দেখা যায়।
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার একপর্যায়ে ছাত্রদলের একটি গ্রুপ পিছু হটে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে ঢুকে পড়লে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রদল কর্মীদের ওপর চড়াও হয়। কিছুক্ষণ পর আইনজীবী সমিতি ভবনের গ্যাংওয়ের কাছে কয়েকজনকে আহত অবস্থায় পরে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলকর্মী নাহিদ চৌধুরী। পরে আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নাহিদ চৌধুরী ছাড়া আহতরা হলেন- মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাহার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের কর্মী এইচেএম শামীম হোসেন, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক লাবু ব্যপারী, ইডেন কলেজের ছাত্রদলের কর্মী জান্নাত।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক এস এম মাসুম বিল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা করেছে। ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের ২০ থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন-চারজনের অবস্থা খুবই খারাপ। নাহিদ চৌধুরীকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এখন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ’
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, সাবেক বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এ দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের যে আলামত সেটি দেখা যাচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের ভেতরে এসে এভাবে গাড়ি ভাঙচুর এটা কিসের আলামত। আগে তো সুপ্রিমকোর্টের ভেতরে এসে কেউ মারামারি করত না। ’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ দেশে বিচার চেয়ে লাভ নাই। সরকার যেটা চাইবে সেটার বিচার হবে। সরকার যেটা চাইবে না, সেটা হবে না। পুলিশ এটার (গাড়ি ভাঙচুরের) এফআইআরই নিবে না। এটাই চলছে। ’
এদিকে, ঘটানার পরপরই সুপ্রিমকোর্ট, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. বজলুর রহমান, রমনা অঞ্চলের ডিসি, আপিল ও হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ বৈঠক হয়।
আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১২টায় এ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী রবিবার থেকে সুপ্রিমকোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। সুপ্রিমকোর্টের গেটগুলোতে আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীরা যাতে সুপ্রিমকোর্টে নির্বিঘ্নে, স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদালত অঙ্গনে যাতে কোনো বহিরাগত লোক ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। ’
সুপ্রিমকোর্টের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আরো সমন্বিত বৈঠক করা হবে বলেও জানান সুপ্রিমকোর্টের এ রেজিস্ট্রার। হামলা, ভাংচুর, মারামারির প্রতিবাদে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাৎক্ষণিক সমাবেশ করেন। সে সমাবেশ থেকে তারা আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..