রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মীর আহসান হাবিব। প্রায় দুই সপ্তাহ পর পরিবারের জন্য গরুর মাংস কিনতে এসেছেন দক্ষিণ বাড্ডা বাজারে। এক কেজি মাংস কিনলেন তিনি ৭১০ টাকা দিয়ে। এক হাজার টাকার নোটের বাকি ২৯০ টাকা আদা, রসুন, মসলা আর আলু কিনতেই শেষ।
জানতে চাইলে আহসান হাবিব বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে মাংস কিনেছিলাম ৬৫০ টাকায় আর এখন ৭১০- দাম বাড়ল ৬০ টাকা। তবে বেতন এক টাকাও বাড়েনি। আর সয়াবিন তেলের কথা কী বলব। সব কিছুর দাম এত বেশি যে বাজারের ব্যাগ এক হাজার টাকায়ও ভরে না। ’ তিনি বলতে থাকেন, ‘সরকার যতই বলছে মাথাপিছু আয় বেড়েছে, কিন্তু আমি দেখছি আমার আয় বাড়েনি। হিসাবের টাকার সংসারে আজ এটা নাই তো কাল ওটা নাই। ’ তিনি আরো বলেন, ‘বাড়িভাড়া, ছেলেমেয়ের স্কুলের খরচ—সব কিছু মিলিয়ে বারবার হিসাব করতে হচ্ছে বেতনের টাকায়। ’
দেশে খাবারসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই হিসাবে বাড়েনি আয়। তাই হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে আহসান হাবিবের মতো চাকরিজীবীদের। নানা উপায়ে এই হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছেন নির্দিষ্ট আয়ের এই মানুষগুলো।
দক্ষিণ বাড্ডার একই বাজারে সবজির দাম নিয়ে গার্মেন্টকর্মী আব্দুল মতিন বলেন, ‘বাজারে কোনো সবজি ৬০ টাকার নিচে নাই। আমি বেতন পাই ১৬ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে খাওয়া খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগে ২০০ টাকা হলে মোটামুটি তিন-চার ধরনের সবজি কেনা যেত, এখন তা আর কেনা যাচ্ছে না। ’
মেরুল বাড্ডায় একটি মুদি দোকান থেকে তেল কিনছিলেন গৃহিণী আসমা আক্তার। তেল নিয়ে প্রশ্ন করতেই যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন তিনি। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘আর কত কম তেলে রান্না করা যায়। আগে মাসে তেল লাগত পাঁচ লিটার, এখন দুই লিটারে সংসার চালাচ্ছি; আর কত কম দেওয়া যায় বলেন? বেতন যা তা-ই আছে। এদিকে শুধু খাবার খরচই বেড়েছে কয়েক গুণ। ’
খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সকালের নাশতায় ছাড় দিচ্ছেন বেসরকারি চাকরিজীবী স্বপ্নিল হক। তিনি ব্যাচেলর বন্ধুদের নিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকেন। তাই সকালে অফিসে যাওয়ার আগে বাইরে নাশতা করতেন পরোটা-ডিম দিয়ে। তবে এখন তাঁর নাশতা হয় শুধু বিস্কুট দিয়ে। কখনো কখনো আগের রাতের ভাত দিয়ে। তিনি বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার পর একটি পরোটার দামই নিচ্ছে ১০ টাকা। আর ডিম ২৫ টাকা। দুটি পরোটা, ডিম আর একটু ডাল খেলেই খরচ ৬৫ টাকা। আগে লাগত ৩৫ টাকা। তাই জীবন চালাতে নতুন পথ বের করেছি। ’
এ জাতীয় আরো খবর..