×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৫-১৬
  • ৯৫ বার পঠিত
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম অস্থির দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের এশিয়া কর্মসূচির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান

দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পর এখন শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

কুগেলম্যান : শ্রীলঙ্কায় যা হয়েছে তা পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক ঝড়।

অনেক বছরের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা দেশটির অর্থনীতিকে ভয়ানক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। বিশেষ করে মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো সাম্প্রতিক ধাক্কা একে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
অর্থনীতি সামলানোর বদলে অর্থনীতি নিয়ে সরকার জনগণের উদ্বেগের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন। সুতরাং এটি এখনো রাজনৈতিক সংকট হিসেবে আছে। এটি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট সমাধানকে আরো কঠিন করে তুলবে।  

পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট কি শেষ? পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

কুগেলম্যান : পাকিস্তান তার নিজস্ব সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এই সংকট শ্রীলঙ্কার মতো গুরুতর নয়। তাই বলে পাকিস্তানের আত্মতুষ্টিরও সুযোগ নেই। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান তাঁর সমর্থকদের উজ্জীবিত করেছেন এবং নতুন সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য বিশাল জনতাকে একত্র করেছেন। এখন পর্যন্ত নতুন সরকার পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে আগ্রহী নয় বলে মনে হচ্ছে।

ইসলামাবাদের ওপর আগাম নির্বাচনের চাপ রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবেশ যে কতটা ‘হাইপারপোলারাইজড’, তা দেখে আমি মনে করি না নতুন সরকার ইমরান খানের দাবি মানতে চাইবে। ইমরান খান এ মাসের শেষের দিকে ইসলামাবাদে একটি লং মার্চের আয়োজন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই ঘটনা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে। তাই পাকিস্তানের সামনে কিছু কঠিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সময় আসছে।

শ্রীলঙ্কাকে এখন ‘ঋণের ফাঁদ’ এবং শাসনব্যবস্থার সমস্যার উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশেও কিছু ব্যক্তি এবং বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধিরা সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হবে বলে শঙ্কা জানাচ্ছেন। এমন কোনো আশঙ্কা আপনি দেখছেন কি?

কুগেলম্যান : বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মানের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ আছে। কিন্তু এর পরও বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম অস্থির দেশগুলোর মধ্যে একটি। শ্রীলঙ্কা এখন চরম সংকটে। আফগানিস্তানের অর্থনীতি ধসের কাছাকাছি। পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট এবং বিপজ্জনক রাজনৈতিক পরিবেশ রয়েছে। নেপাল ক্রমবর্ধমান ঋণ সংকট অনুভব করতে শুরু করেছে। এর বিপরীতে, বড় ঋণ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এই অঞ্চলে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। মহামারি থেকেও তুলনামূলক ভালোভাবে ফিরে এসেছে। প্রতিবেশী কিছু দেশে সরকার যে ধরনের চাপে আছে ও জনরোষের শিকার হচ্ছে, তা বাংলাদেশে নেই।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আপনার দৃষ্টিতে কেমন? এই সম্পর্কের মধ্যে মানবাধিকার, শ্রম পরিস্থিতি ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগই প্রাধান্য পাচ্ছে, নাকি আরো অনেক উপাদান আছে?

কুগেলম্যান : ওয়াশিংটন ডিসি ও ঢাকা ৫০ বছরের সম্পর্কের মাইলফলককে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রকৃত বৃদ্ধি প্রদর্শনে ব্যবহার করেছে। এ বছর আমরা ঢাকা ও ওয়াশিংটন উভয় ক্ষেত্রেই উচ্চ পর্যায়ের সম্পৃক্ততা দেখেছি এবং অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। গত কয়েক মাসে নিরাপত্তা ও ব্যবসা বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ হয়েছে। সেখানে অনেক কূটনীতি যোগ হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পররাষ্ট্র দপ্তরের দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

আমাকে বলতেই হবে, বাংলাদেশে মানবধিকার ও শ্রম খাতে সমস্যা নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ সত্ত্বেও বহুমুখী সহযোগিতার জায়গা বেড়েছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরপরই আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা ও ব্যস্ততার সঙ্গে অনেক অগ্রগতি দেখছি। এ থেকে আমার ধারণা, বাইডেন প্রশাসন বিতর্কিত বিষয়গুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণের পথে বাধা হতে দিতে চায় না।

অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার চীনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যদি তাই হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কাছে এর গুরুত্ব কতটা?

কুগেলম্যান : আমি মনে করি না বাংলাদেশ চীনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। নয়াদিল্লির মতো ঢাকারও, নির্ভরতার ধারণার সঙ্গে বিপরীত একটি পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। ঢাকা চায় বেইজিং, ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে। বাংলাদেশ ওই দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত টানাপড়েনের মধ্যে পড়তে চায় না। আমি এটিও আমলে নিচ্ছি যে বাংলাদেশ যেহেতু চীন থেকে অনেক ঋণ নেওয়ার ঝুঁকিগুলো অনুধাবন করতে শুরু করেছে এবং এটি বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক করে তুলেছে। তবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা অবশ্যই থাকবে। কারণ বাংলাদেশের মতো এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশেরই অবকাঠামোগত সহায়তা প্রয়োজন এবং চীন বড় পরিসরে তা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

কুগেলম্যান : আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং এর অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন আছে। কিন্তু এর জন্য বিরোধীদের ওপর দমনপীড়নের মতো ঘটনায় মূল্য দিতে হয়েছে। আমি মনে করি, বিরোধী দলগুলো কিভাবে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয় সেটাই এখন মূল বিষয়। বিরোধী দলগুলো যদি নির্বাচন বর্জন করে তবে সেই নির্বাচনের অবাধ বা ন্যায্য হওয়া নিয়ে সমালোচনা বা উদ্বেগ থাকলেও তা সরকারকে সুবিধাজনক অবস্থা এনে দেবে। সরকার সহজেই বলতে পারে—বিরোধী দল নির্বাচন অংশ না নিয়ে কিভাবে অভিযোগ করে?

কিন্তু যদি বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং তারা হেরে যায়, তবে নির্বাচনে জালিয়াতি ও অন্যান্য বাড়াবাড়ির যেকোনো অভিযোগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য হবে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের অতীত রেকর্ডগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটি বলছি।

বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পূরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে পশ্চিমাদের সমর্থন পাবে বলে মনে করেন? যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বা পশ্চিমা দেশগুলো এ ক্ষেত্রে কত দূর যেতে পারে? ভারতের ভূমিকা কী হতে পারে?

কুগেলম্যান : আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ভারতের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের সম্পর্ক বেশ মজবুত। নির্বাচন অবাধ ও ন্যায্য হয়নি মনে করলে কিছু পশ্চিমা দেশ তাদের রাজধানী থেকে বিবৃতি দিতে পারে। তবে এর সঙ্গে বিরোধী দল বা তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সুর মেলানোর কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। বাংলাদেশের সরকার কোনোভাবেই উত্তর কোরিয়া বা সিরিয়ার মতো বিচ্ছিন্ন কোনো গোষ্ঠী নয়। বিশ্বের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও বিশ্ব বাংলাদেশের যুক্ত হতে ইচ্ছুক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat