×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৫-১৫
  • ১১০ বার পঠিত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে তাঁর দুই ভাইকেও। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অর্থপাচার মামলার পলাতক আসামি পি কে হালদার।


তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচারের অভিযোগে অন্তত ৩৪টি মামলা রয়েছে। পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
গতকাল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ইডি।

নাম নিয়েছিলেন শিবশঙ্কর

পি কে হালদার তাঁর নাম বদলে শিবশঙ্কর হালদার নামে সেখানে বাস করছিলেন। ইডি এক বিবৃতিতে জানায়, জালিয়াতির মাধ্যমে শিবশঙ্কর নামে রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, স্থায়ী হিসাব নম্বর ও আধার কার্ড তৈরি করিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, পি কে হালদারের সঙ্গে আটক তাঁর দুই সহযোগী হলেন প্রীতিশ কুমার হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদার। তাঁরাও পি কে হালদারের মতো জালিয়াতি করে ভোটার আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন ধরনের কার্ড তৈরি করিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, আটক ব্যক্তিরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলে কলকাতার বিভিন্ন নামিদামি এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন।

ইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্তরা এসব সম্পত্তি কিনতে কাগুজে প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে বিভিন্ন ঋণ নিয়েছেন। তবে ব্যাংকগুলো বিষয়টি বুঝতে পেরে বাংলাদেশ পুলিশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে জানায়। পরে বাংলাদেশ যোগাযোগ করে ভারত সরকারের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক পি কে হালদার। তিনি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে যান। পরে যুক্তরাজ্য হয়ে কানাডা যান। এরপর গোপনে তিনি ভারতে এসে নাম পাল্টিয়ে বসবাস শুরু করেন।

দুই দিনের অভিযান

বাংলাদেশ বলার পর গত শুক্রবার পি কে হালদার ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সন্ধানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে ইডি। পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০টি স্থানে একসঙ্গে অভিযান চালায় সংস্থাটি। অভিযানে পি কে হালদারের বাড়ি, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিপুল সম্পদের তথ্য পায় ইডি। গতকাল শনিবারও এ অভিযান অব্যাহত রাখে সংস্থাটি। এদিন দুপরের দিকে অশোক নগরের একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখানেই পি কে হালদারকে পাওয়া গেলে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর দুই ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদারসহ একাধিক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা সবাই দুর্নীতি মামলার আসামি।

ইডি জানায়, পি কে হালদারের অন্তত ৭০ জন সহযোগী নাম পাল্টিয়ে এখনো ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁরা সবাই পি কের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচারে জড়িত। পি কে হালদার ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে গেলেও তিনি ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। গত শুক্রবার দিনভর অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারের আইনজীবী সুকুমার মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মৃধার একটি বাড়ি থেকে প্রচুর অর্থ উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে জালিয়াতি করে পাওয়া টাকা পশ্চিমবঙ্গে নিতে মাছ ব্যবসার আড়ালে পি কে হালদারকে সাহায্য করতেন এই সুকুমার।

পি কে হালদারকে দেশে আনা হবে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বিকেলে বলেন, ছদ্মবেশে ভারতে অবস্থানরত পি কে হালদার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘পি কে হালদারের নামে আমাদের এখানে মামলা রয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই ভারতের কাছে সহযোগিতা চাইব তাঁকে ফেরত আনার জন্য। ’

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানানো হয়নি। বিষয়টি আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পি কে হালদারকে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুরোধ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘পি কে হালদার ভারতে কোনো অপরাধ করে থাকলে সেখানকার আদালতে নেওয়া হবে। অথবা আমাদের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ যে চুক্তি রয়েছে, সেই চুক্তির মাধ্যমে পি কে হালদারকে ভারত থেকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ’

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বাংলাদেশের চার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৩৪টি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পি কে হালদারের লুটপাটের শিকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স।

দুদক সূত্র জানায়, ৩৪ মামলায় ৮৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। ৬৪ জন আসামি ও অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১১ জন আসামি আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat