ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। যাঁরা বলছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের ওই পদত্যাগপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন জয়। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জয় গত রবিবার টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের করণীয়, দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ, জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে সাংবাদিকদের বহিষ্কারের দাবি ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালের কণ্ঠ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তৈমুর তুষার
গত ৫ আগস্ট আপনার মা শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান।
বলা হচ্ছে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আপনি একাধিক গণমাধ্যমে বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন?
সজীব ওয়াজেদ জয় : তিনি পদত্যাগ করেননি।
কারণ পদত্যাগ করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রাষ্ট্রপতি বরাবর দিতে হবে। সেটা করা হয়নি। সেটার সময় ও বাস্তবতা ছিল না। আর জাতির সামনে ভাষণ দিয়েও প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের কথা জানাতে পারতেন।
সেটাও কিন্তু হয়নি। পদত্যাগের আর কোনো গ্রহণযোগ্য পথ আছে কি! যাঁরা বলছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের বলুন প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা পদত্যাগপত্র দেখাক। আমি জানি তাঁরা সেটা দেখাতে পারবেন না।
ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম এবং তাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচার হয়েছে, শেখ হাসিনা বলেছেন তিনি পদত্যাগ করেছেন। তারা বলছে, শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমনটা বলেছেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় : এটি পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। গত ৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত আমার মা কোনো বিবৃতি দেননি। যারা এটা বলছে তারা সত্য বলছে না।
শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ধ্বংসের বিষয়গুলো কি আপনি জেনেছেন?
সজীব ওয়াজেদ জয় : আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতকরাও ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ধ্বংস করেনি। এবার কিন্তু তারা ৩২ নম্বরে লুটপাট করে পুড়িয়ে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করে দিয়েছে। এগুলো কিসের নমুনা, তা বিচারের দায়িত্ব আমি দেশের মানুষের কাছে ছেড়ে দিচ্ছি।
দলের নেতাকর্মীরা তো এখন দিশাহারা। তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কেউ সামনে আসছেন না। এই মুহূর্তে আপনার দিক থেকে কোনো নির্দেশনা আছে?
সজীব ওয়াজেদ জয় : আমরা একটু সময় নিচ্ছি। এরপর নিয়মিত নির্দেশনা পাবেন নেতাকর্মীরা। আসলে তাঁদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, যেভাবে তাঁদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা সবাই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। এর পরও সামনে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস আছে। আশা করছি, এদিন আমাদের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করবেন। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে মনে করছি।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের তালিকা করে তাঁদের জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
সজীব ওয়াজেদ জয় : তারা সাংবাদিকদের প্রেস ক্লাব থেকে বের করে দেওয়ার তালিকা করে দিয়েছে। অথচ কয়েক দিন আগেই তারা গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার ছিল। সাংবাদিকদের প্রেস ক্লাব থেকে বের করে দেওয়ার দাবি কি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়? এটা কি বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ নয়? এটা নিয়ে তো সিভিল সোসাইটির কথা বলতে হবে।