×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-১২
  • ৩৫ বার পঠিত
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে সন্ত্রাসীমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। বিশেষ করে পোশাকশিল্প অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চলগুলোতে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে আসছে সন্ত্রাসের ঘটনা। ঝুট সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক সন্ত্রাসী দল, যারা ওই সব এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরি করে এলাকার পরিবেশ অশান্ত রাখছে, মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। পোশাকশিল্প এদের হাতে জিম্মি।

শিল্পকে এদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান তাঁরা।  
বিজিএমইএর উদ্যোগে গতকাল রবিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জিওসি নবম পদাতিক ডিভিশন (জিওসি নাইন ইনফেন্ট্রি ডিভিশন) এবং এরিয়া কমান্ডার, সাভার এরিয়া বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নেতারা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিল্পমালিকরা এ আহ্বান জানান।

এ সময় চলমান পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্পসহ বাংলাদেশের সব শিল্প-কারখানা স্বাভাবিক নিয়মে চালু রাখতে শিল্পোদ্যোক্তারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা যেগুলো হচ্ছে সেগুলোর দ্রুত সমাধান চান।

বৈঠকে ব্যবসায়ীরা সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে রপ্তানিসহ সব শিল্পের পণ্যবাহী যানবাহনের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান।

তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করা হয়, যার মাশুল দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে করে শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও কমছে। একইভাবে ঢাকা বিমানবন্দরেও পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা ঘটে। ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং দ্রুততর করা এবং ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে পণ্য খালাস দ্রুততর করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক বিভাগকে অনুরোধ জানান।

বিজিএমইএ দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। নবম পদাতিক বিভাগের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান, এনডিসি, পিএসসি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবুর রহমান, বিপিএম-বার, পিপিএম, সেনাবাহিনীর টাস্কফোর্স কমান্ডার কর্নেল আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, বিজিবিএম (বার), পিবিজিএম, এমফিল এবং বিজিবি ও র‌্যাব প্রতিনিধিরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় জীবনের সাম্প্রতিক সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ধৈর্য ও বিচক্ষণতা সহকারে যেভাবে জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে দেশের পুনর্গঠন ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে লিপ্ত হয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আজকের মধ্যে গাজীপুর এলাকার ৯৯.৮৯ শতাংশ কারখানা, সাভার-আশুলিয়া এবং ধামরাই এলাকায় ৯৯.৫১ শতাংশ কারখানা, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শতভাগ কারখানা, ডিএমপি এলাকায় শতভাগ কারখানা, চট্টগ্রাম এলাকায় শতভাগ পোশাক কারখানা খুলে গেছে।

ব্যবসায়ীরা সেনাবাহিনীর উদ্যোগে গঠিত জয়েন্ট টাস্কফোর্সকে সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙচুর করা কারখানাগুলো পরিদর্শন করে উদ্যোক্তা ও শ্রমিক ভাই-বোনদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যও অনুরোধ জানান।

বৈঠকে মেজর জেনারেল মো. মঈন খান, এনডিসি, পিএসসি বলেন, ‘‘এ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করা। শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে শিল্প-কারখানাগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। ‘কুইক রি-অ্যাকশন ফোর্সের’ মাধ্যমে দ্রুত ঘটনাস্থলে টিম পৌঁছে যাচ্ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী সহযোগিতা প্রদান করছে। যার কারণে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় অভিযোগের সংখ্যা প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে কমে গেছে।’’ 

ঝুট ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে যেসব সন্ত্রাসীরা মাঠে তৎপর রয়েছে, তাদের বৃত্তান্ত দেওয়ার জন্য মেজর জেনারেল মো. মঈন খান বিজিএমইএ নেতাদের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আর একটিও কারখানা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা শিল্প পুলিশ দেখবে।’ চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং আরো দ্রুততর করার জন্য তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।

মেজর জেনারেল মো. মঈন খান ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘কারখানার বাইরে থেকে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যা কি না কারখানার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে—এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিল্পের পাশেই রয়েছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat