ইসরায়েল গত সপ্তাহে তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করে একটি মারাত্মক ‘কৌশলগত ভুল’ করেছে। ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
সৌদি উপকূলীয় শহর জেদ্দায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) একটি বিশেষ অধিবেশনে যোগদানের এক দিন পর আলী বাঘেরি বলেন, ‘তেহরানে ইহুদিবাদীরা যে কাজটি করেছে, তা একটি কৌশলগত ভুল ছিল। কারণ এর ফলে তাদের মারাত্মক মূল্য দিতে হবে।
যদিও ইসরায়েল হানিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ইরান প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসরায়েল ‘অন্যান্য দেশে উত্তেজনা, যুদ্ধ ও সংঘাত প্রসারিত করতে’ চাচ্ছে বলে বাঘেরি অভিযোগ করেছেন।
একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তারা ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করার অবস্থানে নেই। তার মতে, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার মতো অবস্থানে ইহুদিবাদীরা নেই। তাদের সামর্থ্য বা শক্তি নেই।’
৫৭ সদস্যের ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বুধবারের বৈঠকে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সেখানে কাতারে বসবাসকারী ও গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হানিয়ার ‘ঘৃণ্য’ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে ‘সম্পূর্ণ দায়ী’ করা হয়েছে।
এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা ও ওয়াশিংটনের কাছ থেকে সংযমের আহ্বান সত্ত্বেও বাঘেরি এএফপিকে জানান, ওআইসি সদস্যরা ইরানের প্রতিশোধের জন্য সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, ফোন কলে হোক বা ব্যক্তিগত বৈঠকের সময়, তারা সবাই এই সন্ত্রাসী অপরাধের জবাব দেওয়ার জন্য ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো, যারা দাবি করে যে তারা ইরানকে প্রতিক্রিয়া সীমিত করতে বলেছে, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে পরামর্শ দেওয়ার অবস্থানে নেই।’
ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির সমীক্ষা অনুসারে, দক্ষিণ ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ১৯৮ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
সেই হামলার পরই যুদ্ধ শুরু হয়। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৯ হাজার ৬৯৯ জন নিহত হয়েছে বলে হামাসশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এদিকে হামাসের লেবানিজ মিত্র হিজবুল্লাহও কয়েক ঘণ্টা আগে হানিয়াকে হত্যা ও বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় তাদের সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বাঘেরির মতে, হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাসহ এই অঞ্চলের অন্য ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ‘অনুরূপ লক্ষ্য’ ছিল। তবে তা কিভাবে তাদের অনুসরণ করা যায় সে বিষয়ে সবাই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানি অভিযান ‘অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার সঙ্গে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ’ হবে।
এ ছাড়া বাঘেরি ওয়াশিংটন ও অন্যান্য দেশকে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করার আহ্বান জানান, যেগুলো গাজায় ব্যবহার করা হতে পারে। পাশাপাশি তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করা উচিত।