গণঅভ্যুত্থানে গত সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর গত দুই দিনে কয়েকটি কারখানায় আগুনের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য তারা বর্তমান সেনা প্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
আজ বুধবার (৭ আগস্ট) ঢাকার প্লাটিনাম গ্র্যান্ড হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসি-বি) সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কারখানা, বিশেষ করে পোশাক কারখানা খুলেছে। কিন্তু অশান্তি ও ভাঙচুরের ভয়ে অনেকে ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাদ বলেন, ‘আমরা জীবনের নিরাপত্তা এবং কারখানা নিরাপত্তা চাই। বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদি চিফ অফ আর্মি স্টাফ বসে দ্রুত পদক্ষেপ নেন, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
অনেক কারখানায় অগ্নিসংযোগ এর ঘটনা ঘটেছে হামিম গ্রুপের বেশ কয়েকটি কারখানা, বেক্সিমকো, গাজী গ্রুপ, স্কয়ার এর হেডকোয়ার্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে।’
আইসিসিবির প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের ধ্বংসযজ্ঞ অবশ্যই রুখে দিতে হবে। এর সঙ্গে স্টুডেন্টরা ইনভল্ভ নয়। সারা দেশে কিছু দুষ্কৃতকারী এ তাণ্ডব চালাচ্ছে।
তাদেরকে রুখতে না পারলে পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে যাবে। সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানাই এই ধ্বংসযজ্ঞ রুখে দেওয়ার জন্য।’
গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ বুধবার কারখানা খোলার কথা থাকলেও আশুলিয়া, ভালুকাসহ বেশ কিছু জায়গায় কারখানা খোলা খোলা যাচ্ছে না। উদ্যোক্তারা খোলার সাহস পাচ্ছেন না। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে একাধিক কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম এ মতিন চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করতে পারছে না। কারখানায় পণ্যের স্তূপ হয়ে আছে। বায়াররা তাদের অর্ডারে প্রায় ৩০ শতাংশ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।’ তবে যদি দ্রুতই পরিস্থিতি শান্ত হলে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
ডিবিএল গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ জব্বার বলেন, ‘বায়ার ক্রমাগত আমাদের কাছে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাচ্ছে। বর্তমান সিচুয়েশন দীর্ঘায়িত করা যাবে না। তবে যদি পরিস্থিতির দ্রুতই উন্নতি করা যায়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা যায় তাহলে আমরা কভার করতে পারব।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, ‘আমরা এখন কঠিন সময় পার করছি। দেশের অর্থনীতির ৮৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের সেটাকে স্তম্ভ করে দিয়ে অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া কঠিন। দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রেসারের মধ্যে ছিলেন বলে জানান আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রেসারের মধ্যে ছিলাম। ওই সময়টিতে পরিস্থিতি এমন ছিল, হয় আপনি আমার পক্ষে থাকবেন, নাইলে আপনি আমার বিপক্ষে। মাঝে মাঝে কোনো অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই।’
ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক ছাত্র হত্যা এবং কারফিউ জারির পর ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তার পক্ষে বক্তব্য দেওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু আমাদের ঘাড়ের ওপর দুই মাথা নেই, সেজন্য সরকার প্রধানের সাথে মিটিং এ আমন্ত্রণ জানালে আমাদের আপত্তি করার সুযোগ ছিল না।’
এ জাতীয় আরো খবর..