×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-০৩
  • ৭৫ বার পঠিত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে সহিংসতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২২ জন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান। তারা ক্ষমতাসীন দলের এবং বিরোধী রিপাবলিকান উভয় দলের সদস্য। আজ ৩ আগস্ট বিবিসির প্রতিবেদনে এই খবর প্রকাশ করা হয়েছে। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চিঠির উদ্যোক্তা সিনেটর এডওয়ার্ড জে. মারকি (ডেমোক্র্যাট- ম্যাচাচুসেটস), প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জিম ম্যাকগভার্ন ও বিল কেটিং।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অন্যরা হলেন- সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন (ডেমোক্র্যাট), ডিক ডারবান  (ডেমোক্র্যাট), টিম কেইন (ডেমোক্র্যাট), টামি বল্ডউইন (ডেমোক্র্যাট), জেফ মারকি (ডেমোক্র্যাট) এবং ক্রিস মারফি। 
এ ছাড়া প্রতিনিধি পরিষদের স্বাক্ষরকারীরা হলেন- শেঠ মুলটন, লোরি ট্রাহান, জো উইলসন, দিনা তিতাস, গ্রেস মেং, গেরি কনোলি, গাবি আমো, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, ইলহান ওমর, নিদিয়া ভেলাজকুয়ে, ড্যান কিলডি, বারবারা লি এবং ডেলিগেট জেমস মোইলান।

শুক্রবার লেখা ওই চিঠিতে তারা বলেছেন, কয়েক সপ্তাহে সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষে লিপ্ত নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এতে বর্তমান সরকারের অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে পড়েছে।
 
চিঠিতে তারা আরো লিখেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্ব করে এমন পদক্ষেপ অব্যাহতভাবে নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে আছে জানুয়ারিতে ভয়াবহ ত্রুটিপূর্ণ এক নির্বাচন। শ্রমিকদের বিষয়ে বিধান উন্নত করতে ব্যর্থতা। তাতে আরো বলো হয়েছে, ছাত্র বিক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞায় থাকা র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে ব্যবহার করেছে।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে দাঙ্গা পুলিশ। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কঠোর কারফিউ ও ‘দেখামাত্র গুলি করার’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বিক্ষোভ দমনের জন্য ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়েছে।
এই চিঠিতে জোর দিয়ে বলা হয়, এসব উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং অব্যাহতভাবে যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে জোরালো সম্পর্ক আছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে সমুন্নত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উদ্যোগ নেবেন আপনি।

সব রকম সহিংসতার অবশ্যই নিন্দা জানাতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।

নিশ্চিত করতে হবে নাগরিক গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতাকে। এর মধ্যে আছে মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সুরক্ষিত রাখা। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ওপরে বর্ণিত নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিতে হবে। উপরন্তু গণতান্ত্রিক আরো অবনতি রোধ করার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকারের বিষয়ে বাংলাদেশি জনগণের অধিকারকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যে সরকার জনগণের মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখবে।
এসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে তারা চিঠিতে লিখেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সব সহিংসতার নিন্দা করতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’ একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিক্ষোভ দমনে যেসব সরকারি কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।

বাংলাদেশের এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদার হতে হবে। যারা বাংলাদেশি জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকারের অধিকারের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ছাত্র বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জোরালো সহিংসতা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরে পুলিশ, বিক্ষোভকারী, বিরোধী কর্মী ও সরকারপন্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। এতে ১৭০ জন নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছে।

চিঠিতে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও উল্লেখ করে মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, আটককৃতদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্ত হলেও এখনো অনেকেই কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মী এবং সরকারবিরোধী সমালোচকদের অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

বর্তমানে বাংলাদেশে হয়রানি, নজরদারি কিংবা শারীরিক আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি কঠোর ডিজিটাল সেন্সরশিপ অব্যাহত রয়েছে বলেও বলা হয় ওই চিঠিতে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশে শ্রম আইন ব্যবস্থার উন্নতি করতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat