×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-১৭
  • ৬৮ বার পঠিত
পরিমাণে বেশি রাজস্ব আয় করেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১২.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার পরও লক্ষ্য পূরণ হয়নি, বরং ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

সদ্যোবিদায়ি ২০২৩-২৪ সংশোধিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা কম।

এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাত লাখ ৬১ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল সরকার। সেখানে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে সরকারি ব্যয়ের অঙ্ক কমিয়ে সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যও কমিয়ে ধরা হয়েছিল চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে রাজস্ব আয় বাড়ানোর। করছাড় কমানোর শর্তও রয়েছে। আদায়ে কড়াকড়ি আরোপের কথাও বলছে সংস্থাটি।

এনবিআর এসব শর্তে রাজি থাকলেও রাজস্ব আয়ে এর কোনো প্রতিফলন নেই। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের ব্যর্থতার জেরে ব্যয় সামলাতে বিপাকে পড়েছে সরকার। ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে বেড়েছে ঋণের পরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এক লাখ ৭৩৮ কোটি টাকা। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।

ঠিকমতো রাজস্ব আদায় করতে না পারায় এক অর্থবছরের ব্যবধানে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
এনবিআরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে তিন লাখ ৭১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। অথচ সংশোধিত লক্ষ্য ছিল চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল এনবিআরকে। পরে বড় অঙ্কের ঘাটতির শঙ্কায় লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে তা চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। তবে এতেও বড় ঘাটতি এড়াতে পারেনি সংস্থাটি।

এনবিআর আমদানি পর্যায়ে এক লাখ ৩৭৮ কোটি টাকা, ভ্যাটে এক লাখ ৪০ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা এবং আয়করে এক লাখ ৩১ হাজার ২৫ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে এর মধ্যে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ ১৫.৬০ শতাংশ, ভ্যাটে ১১.৯৭ শতাংশ এবং আমদানি পর্যায়ে ৮.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রক্রিয়ায়ই মূল সমস্যা। প্রতিবছরই আগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আনুপাতিক হারে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এনবিআরের সক্ষমতা বিবেচনা করে না। যেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, তা আদায় করা প্রায় অসম্ভব।

লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ প্রসঙ্গে একই মত প্রকাশ করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এনবিআরের পক্ষে ১২ থেকে ১৪ শতাংশের বেশি আদায় সম্ভব হয় না। সেখানে যদি লক্ষ্য ২৫ শতাংশ করা হয়, তাহলে হবে না। সমস্যাটা এখানেই।

তবে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এনবিআরের সংস্কার না হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে না। এটা এনবিআরের অন্তর্নিহিত সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে শুধু টার্গেট ঠিক করে দিলে হবে না। সংস্কার না হলে টার্গেট পূরণ করা সম্ভব না, সংস্কার হলে সম্ভব।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘাটতি পূরণের জন্য কর ফাঁকি রোধ, দুর্নীতি মোকাবেলা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। এনবিআরের সংস্কার কার্যক্রম অনেক ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এই জায়গায় ঘাটতি থাকায় রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat