সরকারি চাকরির সকল গ্রেড থেকে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা দায়েরের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মামলা তুলে নিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি হিসেবে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে তারা। শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন কর্মসূচি ঘোষণার সময় এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরকারের উচিত ছিল প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করা এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপের মাধ্যমে কোটা সংস্কার করা। কিন্তু সরকার সেটি না করে আন্দোলনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন দিয়ে দমনের পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আমরা বলে দিতে চাই সরকারের এ ধরনের পরিকল্পনা সরকারের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশ বক্তব্য দিয়ে বলেছে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷ কিন্তু আজকে হঠাৎ করে অজ্ঞাত মামলা দেওয়া হলো সে বিষয়ে আমরা পুলিশের কাছে আমরা জবাবদিহি চাইছি।
ছাত্র সমাজকে এরকম মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে লাভ হবে? আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। যারা বৃহস্পতিবারের ব্লকেড কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় হামলার সাথে জড়িত ছিলেন পুলিশ বাহিনীসহ সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন তাদেরকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এতদিন বাংলা ব্লকেড কার্যক্রম ছিল এবং অনেকে এটিকে জনদুর্ভোগ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। আমাদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে যে ছাত্র ধর্মঘট চলছে সেটির পাশাপাশি আমাদের কর্মসূচি থাকবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি সকল চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং গণ পদযাত্রা।
সকাল এগারোটায় গণ পদযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হবে। সারা বাংলাদেশের অন্যান্য যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গণ পদযাত্রা করে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবে।’
আরেক সমন্বয়ক সার্জিস আলম শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের পেনশন স্কিমের জন্য সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছেন তখন কিন্তু ছাত্ররা ক্লাসে গিয়ে বসে থাকেনি৷ এখন আপনাদের সময় এসেছে এটি প্রমাণ করা যে শিক্ষার্থীরা আপনাদের যৌক্তিক দাবিতে আপনাদের প্রতি সমর্থন করেছে তাদের যৌক্তিক দাবিতে আপনারা কতটুকু পাশে থাকেন। আপনাদের দাবি যদি পূরণ হয়ে যায় তারপরও আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যে ছাত্র ধর্মঘট চলছে এবং চলবে সেটি সামনে রেখে ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো না। এই অপ্রত্যাশিত চিত্র আমরা কখনোই যেন না দেখি যে, আমাদের কিছু শিক্ষক ক্লাসে গিয়ে বসে আছেন, পরীক্ষার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন প্রতিনিয়ত দীর্ঘ করতে হচ্ছে, তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হচ্ছে। কিন্তু এর দায় পুরোপুরি নির্ভর করে সরকারের ওপর। কারণ সরকার যদি যৌক্তিক দাবি মেনে নেয় তাহলে কিন্তু আমাদের রাজপথে থাকতে হয় না।’
এ জাতীয় আরো খবর..