ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছেন, ‘যুদ্ধ সমস্যার সমাধান করতে পারে না’। সেই সঙ্গে মস্কো সফরে তিনি ইউক্রেনে দুই বছর ধরে চলা আক্রমণে শান্তির আহ্বান জানান।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথমবার রাশিয়া গেছেন মোদি। পুতিনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি খুশি যে ইউক্রেনের বিষয়ে আমরা উভয়ই আমাদের মতামত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে পারি।
হিন্দিতে করা মন্তব্যে পুতিনকে মোদি বলেন, ‘যখন নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা হয়, কেউ তাদের মরতে দেখে, তখন হৃদয় ব্যথা করে এবং সেই ব্যথা অসহনীয়। আমি জানি, যুদ্ধ সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সমাধান ও শান্তি আলোচনা বোমা, বন্দুক ও বুলেটের মধ্যে সফল হতে পারে না।’
ভারতীয় নেতা আরো বলেন, ‘আমাদের সংলাপের মাধ্যমে শান্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে।
অন্যদিকে ‘সবচেয়ে জরুরি সমস্যার প্রতি মনোযোগ’ দেওয়ায় মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুতিন বলেন, ‘আপনি ইউক্রেনের সংকট সমাধানের কিছু উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, অবশ্যই সেটি প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে।’
রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে বিশাল হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা মোদি মস্কোতে অবতরণ করেন। সেই হামলায় প্রায় ৪০ জন মারা যায় এবং কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় নিন্দার সৃষ্টি হয়েছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় মোদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে পুতিনকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায়। সেখানে তারা কয়েক ঘণ্টা একসঙ্গে কাটান।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এই ধরনের উষ্ণ যোগাযোগের নিন্দা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতাকে এমন একটি দিনে মস্কোতে বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধীকে আলিঙ্গন করতে দেখা বিশাল হতাশার বিষয় ও শান্তি প্রচেষ্টার জন্য বিধ্বংসী আঘাত।’
ক্রেমলিনে পুতিন ভারত ও রাশিয়ার ‘খুব দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব’কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, দুই দেশ এখন একটি ‘বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত, কৌশলগত অংশীদার’ উপভোগ করছে।
মস্কো বর্তমানে ভারতে কম দামের তেল ও অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী। তবে পশ্চিমাবিশ্ব থেকে ক্রেমলিনের বিচ্ছিন্নতা এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব মস্কো ও নয়াদিল্লির অংশীদারকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের নেতা হিসেবে গত মাসে আবারও ক্ষমতায় ফেরার পর মোদি পশ্চিমা নিরাপত্তার সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করে তুলছেন। চীন ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে বাধা দিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা শক্তিগুলো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে দেশটিতে চাপ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সোমবার মোদিকে আহ্বান জানিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় তিনি যেন স্পষ্ট করেন, ‘ইউক্রেনে সংঘাতের যেকোনো সমাধানে অবশ্যই...ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে জাতিসংঘের সনদকে সম্মান করতে হবে।’
মোদি ২০১৯ সালে শেষবার রাশিয়া সফর করেছিলেন। তার দুই বছর পর পুতিনকে নয়াদিল্লিতে স্বাগত জানান তিনি, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে। ভারত তখন থেকেই রাশিয়ার সুস্পষ্ট নিন্দা থেকে সরে এসেছে এবং মস্কোকে নিন্দা করে জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো থেকে বিরত থেকেছে।
সূত্র : এএফপি
এ জাতীয় আরো খবর..