×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-০৪
  • ৮১ বার পঠিত
জুয়েলারি শিল্প ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটি খাত। অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ব্যবহার জুয়েলারি শিল্পে বিপ্লব ঘটাবে। তৈরি পোশাক খাতের মতো এই স্বর্ণ শিল্পখাতও নীতি সহায়তা পেলে একদিন বিলিয়ন বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা আনবে। নীতি সহায়তা পেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি, সেটা পূরণে এই খাত সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে বক্তারা জানান।
 
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা’র (আইসিসিবি) পুষ্পগুচ্ছ হলে প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী বাংলাদেশ (আইজেএমইবি)-২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঐতিহ্যবাহী ও পণ্যভিত্তিক সর্ববৃহত্ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস যৌথভাবে এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছেন। প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে ভারত, ইতালি, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানী, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও থাইল্যান্ড সহ বিশ্বের ১০টি দেশের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান। তিনদিনব্যাপী প্রদর্শনীটি আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত চলবে।

প্রদর্শনীটি ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপ ডিরেক্টর আহমেদ ইব্রাহিম সোবহান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ইষ্ট ওয়েষ্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি দীলিপ কুমার রায়সহ বাজুসের নেতারা। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমদ, ভারতের কেএনসি সার্ভিসেসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রান্তি নাগভেকার, বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি দীলিপ কুমার রায়, সহ-সভাপতি সুমিত ঘোষ অপুসহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল। 
বক্তব্যে এফবিসিসিআয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশে প্রথম তিনদিনের আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী শুরু হলো। এই শিল্প রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে অবদান রাখছে। রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাক খাতের মতো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আনবে বলে সেই প্রত্যাশা আমরা করি।

এক্ষেত্রে নীতি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিসহায়তা পেলে ব্যবসায়ীকভাবে এই খাত আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’ 
তিনি বলেন, ‘শিল্পকারখানা ও ট্রেড এই দুটি বিষয়কে আলাদা করতে হবে। যারা শিল্পকারখানা করে তাদের জন্য নীতি সহায়তা এক রকম এবং যারা ট্রেড করে তাদের জন্য নীতি সহায়তা আরেক রকম হবে। তাহলে অনেকেই শিল্প করার জন্য এগিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করবে সেটা পূরণ হবে।’

স্বর্ণ বিক্রিতে ভ্যাট কমানোর বিষয়ে এফবিসিসিআয়ের সভাপতি বলেন, ‘স্বর্ণ বিক্রয়ে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে ভ্যাট ৫ শতাংশের নিচে আছে, এজন্য আমি এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করবো যাতে স্বর্ণ বিক্রয়ে ৩ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে দেয়।’

ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমদ বলেন, এই শিল্পের বিশাল সম্ভবনা রয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান যেটাতে হাত দেন সেটা সোনা হয়ে যায়। আর বাজুসের দায়িত্ব সায়েম সোবহান আনভীর নেওয়ার পর থেকে স্বর্ণ যে একটা বড় শিল্প খাত এবং সেখান থেকে রপ্তানি হতে পারে সেটা বাজুস দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন।’
 
আব্দুল মাতলুব আহমদ বলেন, ‘আমি অপেক্ষায় আছি সরকার কবে এখাতে প্রণোদনা দেবে। বাংলাদেশের যে প্রতিভাশালী কারিগর রয়েছে তারা যদি একটু প্রশিক্ষণ পায় তাহলে যেকোনো খাত থেকে স্বর্ণ খাত অনেক বেশি লাভজনক খাত হবে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় নতুন নতুন পণ্য আনতে বলছেন। স্বর্ণ হলো সেই পণ্য যা সব খাতকে ছাড়িয়ে যাবার সক্ষমতা রাখতে পারে। বাজুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটা স্বর্ণের নতুন সোর্স হিসেবে পরিচিত করতে পারবো।’

বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি ডা. দীলিপ কুমার রায় বলেন, ‘এখন থেকে আমরা আর বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকার এনে বিক্রি করবো না। আমাদের দেশে স্বর্ণালংকার তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবো, এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদের এই প্রদশর্নী। আমাদের একটি বদনাম আছে, যে বিদেশ থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণালংকারের দাম ভরিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি। সেটা যাতে না থাকে সে জন্য এই আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজের প্রদশর্নী।’

ডা. দীলিপ কুমার রায় বলেন, ‘বাংলাদেশে এক ভরি স্বর্ণালংকার হাতে তৈরি করলে ৮ থেকে ৯ শতাংশ নষ্ট হয়। আর মেশিনে তৈরি করলে ২ থেকে ৩ শতাংশ হয়। এ জন্য আমদের যে ছোট-বড় কারখানা রয়েছে তারা সকলে আমাদের অলংকার দেশেই তৈরি করবে এবং চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবে। অনেকেই বলেছেন মেশিনে অলংকার তৈরি হলে ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে, কারিগর বেকার হবে। সেটা কখনো হবে না, কারণ স্বর্ণ শিল্পীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। এজন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হচ্ছে। চারুকলার ছাত্রদের দিয়ে নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করা হচ্ছে, সেই ডিজাইনে অলংকার তৈরি করে আমাদের স্বর্ণ শিল্পীরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
 
ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রান্তি নাগভেকার বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা এই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী আয়োজন করেছি। পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমরা গিয়েছি- সেখানে বাংলাদেশের কারিগদের হাতের কাজের সুনাম পেয়েছি। এই কারিগরদের হাতে যদি আধুনিক মেশিন যুক্ত হয়, তাহলে বিশ্বজয় করবে বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্প।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat