দ্রব্যমূল্য নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে গরীব মানুষের কাছে নিত্যপণ্যকে সহজলভ্য করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মত ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সরকার বিপদের মধ্যে আছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) বিল-২০২৪ পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সচিব পদের নাম পরিবর্তন করে ‘পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ)’ করতে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বিলটি পাসের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এরআগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।
বিল পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। টিসিবি নামে একটা সংস্থা আছে যারা বাজারে ন্যায্য মূল্য পণ্য বিক্রি করে। উপজেলায় পর্যায়ে দেখেছি একটা কার্ড দেওয়া হয়েছে, যার জন্য পাঁচ-ছয়টা পণ্য কিনতে হবে। অনেক মানুষ এটা নিতে পারে না।
যার যেটা প্রয়োজন নেই সেটাও টিসিবির কাছ থেকে নিতে হবে। এটা হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। যেখানে যা প্রয়োজন নেই সেটাও নিতে হবে, যা প্রয়োজন তাও নিতে হবে। এ আইনটি না এনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কোন আইন নিয়ে আনতেন, সিন্ডিকেট ভাঙার মত কোন আইন নিয়ে আনতেন তাহলে মনে করতাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভালো কোন কাজ করছে। বিভিন্ন সময় তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
যখন তারা যান তখন বাজারটা ঠিক আছে। কিন্তু তারা চলে আসলে আবার যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় চলে যায়। দ্বিগুণ বাড়ে। সিন্ডিকেট ভাঙা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মত ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আছে বলে আমার জানা নেই।
বাজারে সকল পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানান হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বলেন, ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। কম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা লাভ করে কোথায় নিয়ে যাবে জানি না। ওষুধ কম্পানিগুলো শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, কম শুল্ক দিয়ে কাঁচামাল নিয়ে আসে কিন্তু আমাদের দেশে দাম বেশি। ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মানুষ সুচিকিৎসা পেত। আইন করে ক্যান্সারে ওষুধের দাম, কিডনি চিকিৎসা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। এ কম্পানিগুলো কি বাইরের? এটা কি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি? আমাদের দেশি মালিক। এদের কি বিবেক নেই? ১০০ শতাংশ লাভ করে। যারা দোকানে বিক্রি করে ৩০-৪০ শতাংশ কর দেয়। অনেক ওষুধের মধ্যে দাম লেখা থাকে না। সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। মানুষের হাহাকার অবস্থা। আওয়ামী লীগের এত উন্নয়ন ও অর্জনের পরেও বাজার নিয়ন্ত্রণ না করায় সরকার বিপদের মধ্যে আছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, বিলটিতে জনগণের স্বার্থ নেই। এখানে শুধু শব্দের পরিবর্তন। জনগণের স্বার্থ তখনই থাকত যদি ট্যারিফ কমিশনের দায়িত্ব ভোগ্য পণ্য, নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ, বাজারে সহজলভ্যতা, আমদানি ও উৎপাদন সমন্বয় করে মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়া। সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে গরীব মানুষের কাছে নিত্য পণ্যকে সহজলভ্য করা। সেক্ষেত্রে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ট্যারিফ কমিশনের কাজ। ট্যারিফ কমিশন তা না করে শুধু মাত্র সচিবের পদ নিয়ে বিল। এরআগে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে সচিব শব্দ বাদ দিয়ে কর্মকর্তা লিখলাম। সংসদের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পয়সা খরচ না করে একটি প্রশাসনিক আদেশে সমস্ত সচিব কোথায় কোথায় বলতে হবে, মন্ত্রিসভা বলে দিক, সচিব বলে দিক আমরা করেছি। যেখানে জনগণের স্বার্থ নেই। একটা মাত্র সচিবের পদ থেকে কর্মকর্তা এ শব্দের পরিবর্তন করার জন্য সংসদের সাড়ে তিনশ এমপিকে ডেকে এনে, প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে আপনি (মন্ত্রী) থেকে শব্দ পরিবর্তন করে অর্থের অপচয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..