দেশের বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বর্তমানে যাঁরা কর্মরত আছেন, তাঁরাই কেবল বিদ্যমান নিয়মে পেনশন পাবেন। আজ সোমবার থেকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসছেন রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থায় যোগ দেওয়া নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে আসবেন নতুন সরকারি চাকরিজীবীরা।
ওই সব স্বশাসিত বা সমজাতীয় সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় নতুন স্কিম ‘প্রত্যয়’। আগে থেকে ঘোষণা দেওয়া এই সিদ্ধান্তে সরকার অনড় রয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
যদিও সরকারের ঘোষণার পর থেকেই বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে আজ ১ জুলাই থেকে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরতিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনভুক্ত দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এর ফলে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
গত কয়েক মাসে ধারাবাহিক নানা কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হওয়ায় গতকাল রবিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া। গতকালও শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, পেনশন সুবিধা পান এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে।
সরকারি কর্মচারীদের পেনশন কর্মসূচির আপাতত নাম রাখা হয়েছে ‘সেবক’। তবে এ কর্মসূচির রূপরেখা প্রণয়নে কাজ শুরু হয়নি।
তবে প্রত্যয় বাধ্যতামূলক করার জন্য স্বশাসিত বা সমজাতীয় সংস্থার বর্তমান কর্মীরা যে প্রদেয় ভবিষ্য তহবিল (সিপিএফ) সুবিধা পাচ্ছেন, আইন সংশোধন করে তা বাতিল করতে হবে। সেই কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কমসংখ্যক স্বশাসিত বা সমজাতীয় সংস্থায় পেনশন কর্মসূচি চালু আছে।
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই সিপিএফ ব্যবস্থা প্রযোজ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি সংস্থার ব্যতিক্রম উদাহরণ ছাড়া এ ব্যবস্থায় চাকরি শেষে পেনশন পান না কেউ, পান এককালীন আনুতোষিক।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ১৮ বছরের বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তার কাঠামোর আওতায় আনতে গত বছরের ১৭ আগস্টে চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় চারটি পৃথক স্কিম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ‘প্রবাস’ স্কিমটি প্রবাসীদের জন্য। ‘প্রগতি’ স্কিম চালু করা হয়েছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। অনানুষ্ঠানিক খাত, অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য রয়েছে ‘সুরক্ষা’। আর ‘সমতা’ স্কিম নিম্নআয়ের মানুষের জন্য।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পেনশন সুবিধা পান এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এরই মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এ ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ২০২৫ সালের জুলাই থেকে এ ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হবে।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার তহবিল পরিচালন ব্যয় সরকার বহন করায় এবং বিনিয়োগ মুনাফা জমাকারীদের মধ্যে বিভাজন হওয়ায় এটি হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পেনশন স্কিম।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় ‘প্রত্যয়’ নামে একটি স্কিম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ স্কিমের আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত এবং সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা এমনকি আগামী জুলাইয়ের আগে কেউ যোগদান করলে, তাঁরাও বিদ্যমান নিয়মে পেনশন পাবেন।
এদিকে ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা (দুটির মধ্যে যেটি কম) বেতন থেকে কেটে নেবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। পরে উভয় অর্থ উক্ত প্রতিষ্ঠান ওই কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিপরীতে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে জমা দেবে। জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদের ভিত্তিতে অবসরকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশন ভোগ করবেন।
এ জাতীয় আরো খবর..