দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গত তিন দিনে প্রায় আড়াই লাখ লিটার অবৈধভাবে মজুদ করা ভোজ্য তেল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই আট জেলা থেকে প্রায় এক লাখ ৭৪ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়। এসব তেলের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেল, সরিষার তেল ও পাম অয়েল। গতকাল শুধু রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারেই সাড়ে ৯৩ হাজার লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও প্রশাসন পৃথকভাবে এসব অভিযান চালায়। ভোক্তা অধিকার সূত্র জানায়, গত রবি ও সোমবার দুই দিনে সংস্থাটি জব্দ করে ৬৭ হাজার ৮৪০ লিটার ভোজ্য তেল।
গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারেও ভোজ্য তেলের দাম সমন্বয় করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই দাম গত শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা পুরনো তেল মজুদ করে এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ কারণে ঈদের আগে থেকে চাহিদামতো ভোজ্য তেল পাচ্ছিল না ভোক্তারা।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তথ্য মতে, দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ বেশি ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে। তার পরও বাজারে ভোজ্য তেল সংকট দেখা দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে গত ৮ মে পর্যন্ত ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৫ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৫৪ দিনে আমদানি হয়েছে চার লাখ ৯১ হাজার ৩০৩ মেট্রিক টন তেল। এর মধ্যে পাম তেল তিন লাখ ১৬ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। সয়াবিন তেল এক লাখ ৭৪ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন। এখনো অর্ধেকের বেশি ভোজ্য তেল খালাস করেননি মিলাররা।
এনবিআর জানায়, ঈদের আগে-পরে আট দিনে (১ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত) ১৯ হাজার ৩০০ টন পাম তেল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে মিলাররা খালাস করেছেন সাত হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত পাম তেল। তবে এই আট দিনের সয়াবিন তেল খালাস নেননি মিলাররা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভোজ্য তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী আগের মূল্যের তেল নতুন নির্ধারিত দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করে রেখেছেন। এ কারণে সংকট তৈরি হয়। আমরা অভিযান চালিয়ে এসব তেল বের করে আনছি। আমাদের এই কার্যক্রম চলবে। ’
ভোক্তা অধিকার সূত্র মতে, গত দুই দিনে শুধু তাদের অভিযানেই এক লাখ ১৫ হাজার ৩২ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল জব্দ করা হয় ৪৫ হাজার ১৯২ লিটার তেল।
বানেশ্বরে সাড়ে ৯৩ হাজার লিটার তেল রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে বেশ কয়েকটি গুদাম ও দোকানে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা ৯৩ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজশাহী জেলা পুলিশ ও পুঠিয়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব তেল জব্দ করে।
পুঠিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৬১৬ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। অভিযান এখনো চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।
এদিকে গতকাল অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুদ ও নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করায় রাজশাহীর তিন ব্যবসায়ীকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
কুষ্টিয়ায় জব্দ ৪০ হাজার লিটার
কুষ্টিয়ায় সয়াবিন তেল মজুদ করে রাখা ও বেশি দামে বিক্রির অপরাধে তিন দোকানিকে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল ভোক্তা অধিকার এই অভিযান চালায়। ভোক্তা অধিকার কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মণ্ডল জানান, বড়বাজার এলাকায় মেসার্স মা ফুড প্রডাক্টসের গুদামে ৪০ হাজার লিটার তেল মজুদ পাওয়া যায়।
উল্লাপাড়ায় তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
সয়াবিন তেল মজুদ, বেশি মূল্যে বিক্রি ও তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে ক্রেতাকে বাধ্য করার দায়ে গতকাল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ সময় অবৈধভাবে মজুদ করা প্রায় ছয় হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল নায্যমূল্যে খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়। উপজেলার পাঁচলিয়ায় ভোক্তা অধিকার এই অভিযান চালায়।
দুমকীতে জব্দ ৩১০৬ লিটার তেল
পটুয়াখালীর দুমকীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মুরাদিয়ার বোর্ড অফিস বাজারের তিন ব্যবসায়ীর অবৈধ মজুদ করা তিন হাজার ১০৬ লিটার সয়াবিন ও পাম অয়েল জব্দ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে এই অভিযান চালানো হয়।
ঝিকরগাছায় দুই ব্যবসায়ীর জরিমানা
অবৈধভাবে ভোজ্য তেল মজুদের দায়ে যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভা এলাকায় গতকাল দুই ব্যবসায়ীকে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী আলম স্টোরের আলম হোসেনের দোকান থেকে ৫০ লিটার এবং সন্তোষ স্টোরের সন্তোষ ঘোষের দোকান থেকে এক হাজার ৬৬ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
ঈশ্বরদীতে গুদামে অভিযান
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কর্মকারপাড়ায় একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদ করা মোট ১৮ হাজার ২০০ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন তেল, সাত হাজার লিটার খোলা সরিষার তেল এবং এক হাজার ২০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল।
সিলেটে মজুদ সাড়ে পাঁচ হাজার লিটার
সিলেটে এক দোকানেই মজুদ ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার লিটার সয়াবিন তেল। গতকাল দিনভর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার কালিঘাটের সেই দোকান মাহের ব্রাদার্সে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক ফখরুল ইসলাম।
গাজীপুরে দুই গুদামে সাত হাজার তেল
গাজীপুরের বোর্ডবাজারে দুটি গুদাম থেকে সাত হাজার ১৫৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে মেসার্স মনির জেনারেল স্টোর ও মেসার্স আরপি ট্রেডার্সের গুদামে ওই অভিযান চালানো হয়।
এ জাতীয় আরো খবর..