×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৯
  • ৭৪ বার পঠিত
বিত্তশালীদের ‘করভার লাঘবে’ আয়কর হার কমিয়ে আজ শনিবার সংসদে পাস হচ্ছে অর্থবিল। অন্যদিকে কর ‘ন্যায্যতা নিশ্চিত’ করতে কম্পানির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ মওকুফ করা হচ্ছে। এ ছাড়া রিটার্নে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি আয় দেখানো হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ট্যাক্স ফাইল অডিটে পাঠাবে না। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ আয়কে কর আওতার বাইরে রাখার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে আয়কর আইনে।

তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির সর্বোচ্চ করহার ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এরপর গত তিন বছর এই করহার অব্যাহত ছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করহার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে এই হার প্রযোজ্য।

কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপে সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে এনবিআর। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের যুক্তি—‘করভার লাঘবে’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
এদিকে বিত্তশালীদের গাড়িতেও কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সমাজের বিত্তবানরা সাধারণত নিজ নামে গাড়ি কেনেন না।

তাঁরা কম্পানির নামে কেনা গাড়ি ব্যবহার করেন। যেমন, সাম্প্রতিক সময়ে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে ইফাতের ব্যবহৃত গাড়িগুলো তাঁর কম্পানির নামে কেনা ছিল। পক্ষান্তরে অনেক মধ্যবিত্ত একাধিক গাড়ি নিজ নামে কিনে রেন্ট-এ-কার বা উবার-পাঠাওয়ে ভাড়ায় চালান। তাঁদের পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে। সরকারি গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ বাতিল করা হচ্ছে।

২০১৫ সালের ১৭ মে এনবিআর একই মালিকানাধীন একাধিক গাড়ি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গাড়ির অগ্রিম কর নিয়মিত আয়করের অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ধার্য করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে সেটি পুরনো আয়কর অধ্যাদেশে এবং সর্বশেষ নতুন আয়কর আইনে পরিবেশ সারচার্জ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অডিটে ছাড় : হয়রানি কমিয়ে আনতে অডিটের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। এ জন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তার অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী। নতুন নিয়মে, আগের বছরের চেয়ে রিটার্নে ১৫ শতাংশ আয় বেশি দেখালে ট্যাক্স ফাইল অডিটে পাঠানো হবে না। সংশোধিত রিটার্নের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য থাকবে। শুধু ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা এ সুযোগ পাবেন।

আগের নিয়মেই হেবা দলিল : প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-প্লট-ফ্ল্যাট দান বা হেবা দলিলের ওপর উৎস কর আরোপ করা হয়েছিল। এ কারণে সাধারণ বেচাকেনার মতো হেবা দলিলে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় এলাকা, জমির শ্রেণি অনুযায়ী হস্তান্তরকারীকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হতো। সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। অর্থাৎ আগের নিয়মেই উৎস কর পরিশোধ ছাড়াই আপন ভাই-বোন, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও নাতি-নাতনির সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে হেবা দলিল করা যাবে। বর্তমানে হেবা দলিলে দুই হাজার ৫১০ টাকা কর দিতে হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ টাকা, স্ট্যাম্প শুল্ক এক হাজার টাকা, হলফনামা স্ট্যাম্প ৩০০ টাকা, কোর্ট ফি ১০ টাকা ইত্যাদি।

ট্রাস্ট-তহবিলের মূলধনী আয়ে কর : কম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনী আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত থাকছে। তবে মূলধনী আয় ৫০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে গেইন ট্যাক্স আদায় করা হবে। প্রথমত, শেয়ার কেনার পাঁচ বছরের মধ্যে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলে ব্যক্তি করদাতার স্ল্যাব অনুযায়ী ট্যাক্স দিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে একজন ব্যক্তি শেয়ার কিনে ছয় মাস বা এক বছর পর বিক্রি করে ৫১ লাখ টাকা মুনাফা করলে সে ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। তাঁকে এক লাখ টাকার ওপর গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এই এক লাখ টাকা করদাতার মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং করদাতাকে স্ল্যাব অনুযায়ী আয়কর পরিশোধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওই ব্যক্তি শেয়ার কিনে পাঁচ বছর পর একই মুনাফা করলে তাঁর করের হিসাব হবে ভিন্ন। এ ক্ষেত্রেও তাঁর ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি এক লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ১৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশ বহাল : গত ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ আটটি কর সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে শিল্পভেদে কম্পানিগুলোর আয়ের ওপর করহার ২০ থেকে ২৭.৫ শতাংশ বা তারও বেশি প্রযোজ্য হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কারিগরি সহায়তাকারী হিসেবে কর্মরত বিদেশিরা প্রথম তিন বছরের বেতনের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর ছাড় পেত। সেটিও বাতিল করা হয়। এসব অঞ্চলে স্থাপিত কম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনী আয়, রয়ালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপরও ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল, এগুলোও বাতিল করা হয়। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা আগের মতোই কর অবকাশ সুবিধা পাবেন।

কালো টাকায় ট্যাক্স অ্যামনেস্টি থাকছে : নানা মহলের সমালোচনার পরও কালো টাকা সাদা করার ট্যাক্স অ্যামনেস্টি বা বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা এবং বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে।

প্রতিবছর বাজেটে অর্থ আইনের মাধ্যমে সরকার আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস আইনে পরিবর্তন আনে। ২০২৪ সালের অর্থ আইন জাতীয় সংসদে পাস হবে আজ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat