দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। শিখন পদ্ধতিতে পড়াশোনার ঘাটতি ও ভর্তি পরীক্ষাতে সময় কম পাবে এমন অভিযোগ তুলে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সব বোর্ডের শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিতের দাবিতে পরীক্ষা পেছাতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাতেও পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন চলছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল সময় টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সন সময় নিউজে পরীক্ষা পেছাতে পরীক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে উন্মুক্ত মতামত জরিপ চালানো হয়। এতে ৯৯ শতাংশ ভোটার শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
বুধবার (২৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এতে ভোট দেন মোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৯১ জন। এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়েছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৬০৮ জন ভোটার।
তবে পরীক্ষা পেছানোর আলোচনা শুরু হয় সিলেট অঞ্চলের বন্যা থেকে। হঠাৎ বন্যার কারণে শিক্ষা বোর্ডের ১ লাখ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী পড়েছেন বিপদে। আগামী ৩০ জুন থেকে শুরু হবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। তবে বন্যার কারণে তারিখ পরিবর্তন হয়েছে সিলেটে। যেখানে ৯ জুলাই থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা আরও পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীরা।
সিলেট বাদে সারা দেশে পরীক্ষার্থীর বর্তমান সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এসব শিক্ষার্থীই আলোচনায় জোর দিয়েছেন। তারা বলছেন, করোনাকালের শিখন ঘাটতি থাকায় তারা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেননি। তাই পরীক্ষা পেছানোর দাবি তাদের।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে পরীক্ষা পেছানোর দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ লাখের বেশি মানুষ। এছাড়া, বেশ কয়দিনের ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে পানিতে তলিয়েছে টেকনাফ। যদিও পানি কেবল নামতে শুরু করেছে, তবুও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি এখনো দেখা যাচ্ছে না এই অঞ্চলে। পাশাপাপাশি, ময়মনসিংহ বিভাগের বন্যা পরিস্থিতিরও চরম অবনতি হচ্ছে। বন্যা কবলিত রয়েছে বিভাগের নেত্রকোনা জেলার শত শত গ্রাম।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা গত বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের এইচএসসি শেষ করেই ভর্তিযুদ্ধে নামতে হয়। সারাজীবনের স্বপ্ন অল্প কিছুদিনের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে। গত বছর চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা ১০ দিন পেছানো হয়েছিল। কিন্তু মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা পেছায়নি। সব বোর্ডের সঙ্গেই চট্টগ্রামে বোর্ডের পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষা দেয়।
এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রছাত্রীরা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। বাকিদের অনেক পরে ভর্তি প্রস্তুতি শুরু করায় মানসিক চাপের কারণে অনেকের স্বপ্নভঙ্গ ঘটার আশঙ্কা দেখা দেয়। অথচ সবাই একই শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্গত। সবাই 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' পাওয়ার অধিকার রাখে।
তাই বন্যা পরিস্থিতির বিষয়টি আমলে নিয়ে পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের। তিনি বলেন, আগামী ৩০ জুন পরীক্ষার তারিখ আরও অন্তত ৬ মাস আগে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই। নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিতে উন্নতি হচ্ছে। যদি অবস্থা খারাপ মনে হয় তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
তবে এইচএসসি পরীক্ষাকে শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় উল্লেখ করে একযোগে সবার পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এইচএসসি এবং সমমমানের পরীক্ষাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষাটি একযোগে অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি দীর্ঘ সময় ধরে চলে। তাই কারও পরীক্ষা আগে, আবার কারও পরে নেয়াটা কোনো সমাধান না। আমার মতে সবার পরীক্ষা একযোগে নেয়া দরকার। দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে শুধু সিলেটের না পিছিয়ে সব বোর্ডের পরীক্ষাই কিছুটা সময় পিছিয়ে দেয়া যায়। কারণ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর যারা পরে পরীক্ষা দেবে তাদের ভর্তি প্রস্তুতিতে সমস্যা হতে পারে। তাই কিছুটা সময় পিছিয়ে সবার একযোগে পরীক্ষা নেয়াটা যৌক্তিক বলে মনে করি।
তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছুদিন আগেই নতুন ব্যাচ ক্লাস শুরু করেছে। এক্ষেত্রে এখনই পরীক্ষা নিয়ে নিলে আবারও একটি ব্যাচ চলে আসবে। সেক্ষেত্রে আমাদের পাঠদানে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। সার্বিক দিক বিবেচনায় সব বোর্ডের পরীক্ষা কিছুটা পেছানো যেতে পারে বলে অভিমত দেন এই শিক্ষাবিদ।
এ জাতীয় আরো খবর..