×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৬
  • ৭২ বার পঠিত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টেলিগ্রামে লোভনীয় চাকরি দেওয়া, মডেল বানানো এবং মেধা-অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিত একটি চক্র। পরবর্তীতে চক্রটি এসব দিয়ে ব্ল্যাক মেইলের মাধ্যমে ওই তরুণীদের দেহব্যবসায় যুক্ত করত। ভয়ংকর এসব তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি।

সিআইডির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান এবং তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে গড়ে তুলেছিল এই চক্র।

অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারে এ সংক্রান্ত সার্ভিস প্রদান করে গত ৭ বছরে তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে।
আজ বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
 
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জুন) অভিযান পরিচালনা করে যশোর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকে এই চক্রের মূল হোতা মো. মেহেদী হাসান (২৫) ও তার প্রধান সহযোগী শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬) মো. জাহিদ হাসান কাঁকন (২৮), তানভীর আহমেদ দীপ্ত (২৬),  সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার পপি (২৭) ও নায়না ইসলামকে (২৪) আটক করতে সক্ষম হয়।

যেভাবে কাজ করত চক্রটি
শুরুতে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন, কখনও মডেল তৈরি, কখনও বা ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করত চক্রটি।

এতে যারা সাড়া দিত তাদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলত তারা। তারপর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশি বায়ারদের কাছে পাঠানোর কথা বলে মেয়েদের অন্তর্বাস পরিহিত ছবি হাতিয়ে নিত তারা। এসব অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের বাধ্য করত নগ্ন হয়ে ভিডিও কলে ক্যাম সার্ভিসে যুক্ত হতে। এসব সার্ভিস গ্রহণ করত দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রটির হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার।

যারা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে ওই গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকত।
চক্রটি ভিডিও কলের সব কিছু গোপনে ধারণ করে রাখত। এরপর মেয়েদের বাধ্য করত চক্রটির গ্রাহকদের সঙ্গে রিয়েল সার্ভিস বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে। সেসবও একই কায়দায় গোপনে ধারণ করে রাখত তারা। এভাবে চক্রটির হাতে আধুনিক যৌন দাসীতে পরিণত হয়েছিল শত শত তরুণী।

দীর্ঘদিন যাবৎ অনুসন্ধান করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার এই চক্রের মূল হোতা ও তার প্রধান সহযোগীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে সিআইডি প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার এর একটি চৌকস দল তাদের গ্রেপ্তার করে।
 
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ-বিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। নানা নামে তাদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা কয়েক লাখ। বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভিডিও কল ও দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে এবং গোপনে ধারণকৃত সেসব ভিডিও বিক্রি করে চক্রটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে এ চক্রের সদস্যরা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করেছে। নির্মাণ করেছে আলিশান বাড়ি। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক একাউন্টেও বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে। অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করত এমএফএস বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস। এ ছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের আড়াল করার সব কলা-কৌশলও এই চক্রের জানা। ফলে শত শত মোবাইল সিম ব্যবহার করলেও তাদের কোনোটিই প্রকৃত ন্যাশনাল আইডি দিয়ে নিবন্ধন করা নয়। এক্ষেত্রে তারা নিম্ন আয়ের মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিত। সামান্য অর্থ দিয়ে তোলা হত সিম কার্ড। কন্টেন্ট আদান-প্রদান ও সাবস্ক্রিপশনের জন্য ছিল টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম একাউন্ট এবং বিভিন্ন পেইড ক্লাউড সার্ভিস। অল্প বয়সী ভয়ানক চতুর এই দুই মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর জিম্মায় কয়েক হাজার নারী রয়েছে। আছে টিকটক, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সেলিব্রেটিও। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লক্ষ ন্যুড ছবি ও ২০ হাজার এডাল্ট ভিডিওর সন্ধান পাওয়া গেছে।

আটককৃতদের কাছ থেকে মামলায় বর্ণিত টেলিগ্রাম আইডি ‘identifier’, “জনস্বার্থে আমরা” নামক টেলিগ্রাম আইডি ও এজাহারে বর্ণিত টেলিগ্রাম গ্রুপ ১) Jonosarthe Amra (জনস্বার্থে আমরা), (২) Deshi Pompom 14, (৩) Hasib & Silk Trusted Agency, (৪) Direct Desi Vids, (৫) Dhaka Real Service Centre, (৬) Rafsan Hoque Entertainment Agency, (৭) Bangladesh Escort Agency, (৮) International Escort Service, (৯) Model and celebrity Zone, (১০) BD Escort service -সহ অসংখ্য টেলিগ্রাম গ্রুপ, বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের কয়েক লক্ষ ন্যুড ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে।

এ ছাড়াও আটককৃতদের কাছ থেকে মোট ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, ১টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইন, পেনাল কোড ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে আজ বুধবার মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat