×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৬
  • ৪১ বার পঠিত
পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবছর বাজেটে তামাকপণ্যসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্যের ওপর বাড়তি কর আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর লেড বা সিসা রিসাইক্লিংয়ে বাড়তি করারোপ না করে কমানো হয়েছে। আগে বিভিন্ন স্তরে উৎস করহার সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তা কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, সিসার উৎস করহার অর্ধেকের চেয়ে বেশি কমিয়ে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নীতিমালা করে লেড এসিড ব্যাটারি থেকে বেরিয়ে এসেছে। সেখানে বাংলাদেশে উল্টো উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

তবে আয়কর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রিসাইকল খাতকে উৎসাহিত করার অংশ হিসেবে লেড রিসাইকল খাতে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লেডের রিসাইকল শুনতে ভালো শোনা গেলেও আসলে তা না।

লেড বিষাক্ত পদার্থ। আমাদের এর বিকল্প খুঁজতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত লেড কোথায় যায়, তা-ও তদারকি করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।

আমাদের লেড পরিহার করতে হবে।’
 সচেতনতা মাস

সূত্র মতে, লেড এসিড ব্যাটারি রিসাইকল করা ছাড়াই বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। লেড বা সিসার সঙ্গে পানিসদৃশ এসিড যত্রতত্র ফেললে তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে দেশে গরুর দুধে সিসা পাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

জাপানে লেডসহ অন্যান্য ধাতবমিশ্রিত ই-বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে সেখানকার মানুষ মিনামাতা, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছিল।

পরে নদী খনন ও পানি শোধন করে পুরো অঞ্চলকে নিরাপদ করতে হয়। বাংলাদেশে এসংক্রান্ত আইন ও বিধি-নিষেধ থাকলেও বিষয়গুলো তদারকি করা হচ্ছে না। লাইসেন্সবিহীন লেড এসিড পূর্ণ চক্রায়নকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে পরিবেশকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর আশপাশসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লাইসেন্সবিহীন লেড এসিড পূর্ণ চক্রায়নকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে এসিড ও লেডের মাধ্যমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। সিসার মাইক্রো কণা বাতাসে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে।
 
গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতিকর সিসা খাবার, পানীয় ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মাত্রাতিরিক্ত সিসা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি মানুষের হাড়ে প্রবেশ করলে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত থেকে যায়। দেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর সিসা বহন করছে। এর প্রভাবে শিশুর বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে স্বাভাবিক মনোযোগ দিতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে।

মাত্রাতিরিক্ত সিসার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জীবনভর স্নায়বিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। মারাত্মক সিসাদূষণের কারণে অনেক সময় মৃত্যুও হয়।

সিসার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হারের দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ। সিসাদূষণের কারণে প্রতিবছর দেশে এক লাখ ৩১ হাজার বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অন্যদিকে সিসাদূষণে দেশে উৎপাদন যে পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে তাতে বার্ষিক ১৬০ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি দেশে তৈরি পোশাক খাতে আয়ের প্রায় অর্ধেক।

দেশে সিসাদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস পুরনো সিসা এসিড ব্যাটারির অবৈধ রিসাইক্লিং কারখানা। আবার দেশে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে হলুদের গুঁড়ার রং উজ্জ্বলে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত সিসা।
 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লেড বা সিসার বেশ কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। লেড লিথিয়ামের তুলনায় বিষাক্ত। এটি কোনোভাবেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। এটির এনার্জি ডেনসিটি (শক্তির ঘনত্ব) সীমিত। লেডে কর সুবিধা দেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না, বিষয়টি ভাবতে হবে। লেড পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিজ্ঞানীরা লিথিয়ামের বিকল্প হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম আয়ন ব্যাটারি অথবা নিকেল আয়ন ব্যাটারির দিকে ঝুঁকছে। আমাদেরও এখন উন্নত প্রযুক্তির দিকে যেতে হবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো নীতিমালা করে লেড এসিড ব্যাটারি থেকে বের হতে হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat