উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। আজ তার ক্যারিয়ারের ছয় দশক অর্থাৎ ৬০ বছর। আজকের এই দিনে তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেন। সংগীত ক্যারিয়ারে মোট ১৮টি ভাষায় দশ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন এই শিল্পী।
দিনটি স্বরণ করে সকাল থেকেই তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকেই। জানাচ্ছেন শুভেচ্ছা।
তবে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই তাকে সম্মান জানিয়ে এ দিনটি উদযাপন করেছে। প্রচার করেছে সরাসরি অনুষ্ঠান ‘রুনা লায়লা সংগীত জীবনের ৬০ বছর।
’ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে আনন্দ আলো। এদিন চ্যানেল আইয়ের আমন্ত্রণে রুনা লায়লা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। শুরুতেই তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে তাকে চ্যানেল আইয়ের ছাদ বারান্দায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সংগীত জীবনের ৬০ বছর উপলক্ষে রুনা লায়লা বলেন, ‘আপনাদের দোয়া, আশীর্বাদ ও ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
এই ভালোবাসা, আশীর্বাদ শ্রদ্ধা যেন চিরকাল থাকে আমার সাথে।’ চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য তো বটেই, গোটা উপমহাদেশের সংগীতপিপাসু সকলের জন্যই আনন্দের একটি দিন। রুনা লায়লা উপমহাদেশের সংগীতকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন, বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ব বোধ করি।
বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেতা ও রুনা লায়লার স্বামী আলমগীর বলেন, ‘রুনা কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। ৬০ বছর টিকে থাকা এরকম সিরিয়াস না হলে, এরকম প্র্যাকটিস না করলে কোনোদিন সম্ভব নয়।
’ নায়ক আলমগীরেরও আজ একটি বিশেষ দিন ছিল। তিনি এদিনে ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম ক্যামেরার সামনে এসেছিলেন।
আয়োজনে রুনা লায়লাকে নিয়ে কথা বলেছেন মো. খুরশিদ আলম, কাজী হায়াৎ, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস, ওমর সানী, লীনু বিল্লাহ, মানাম আহমেদ, ফোয়াদ নাসের বাবু, শওকত আলী ইমন, মুশফিকুর রহমান গুলজার সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রুনা লায়লার ভাই, মেয়ে ও স্বজনরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশ বিদেশের তারকারাও। ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়ে সনু নিগাম বলেন, ‘আপনি এত ভালো কলাকার, আপনি এত সুন্দর, আপনার ব্যবহার এত ভালো, আপনার সাথে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। যখন থেকে আমার চোখ খুলেছে, তখন থেকে আপনাকে শুনছি। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। পৃথিবী আপনাকে ভালোবাসে, আমি আপনাকে ভালোবাসি।’ আঁখি আলমগীর বলেন, ‘আমরা অনেক গর্বিত যে আমাদের একজন রুনা লায়লা আছেন।’ পাকিস্তানের অভিনেতা ইমরান আব্বাস শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনি বাকি জীবন গাইতে থাকুন, পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করুন। পাকিস্তান থেকে ভালোবাসা জানাই।’ অনুষ্ঠানের শেষে ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’ গানটি গেয়ে শোনান এ প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়িকা সোমনুর মনির কোনাল। এছাড়া গান করেছেন ইমরান, ঝিলিক, লুইপা, অনিমা মুক্তি, অনন্যা।
1
রুনা লায়লাকে নিয়ে আয়োজনে অতিথিরা
উল্লেখ্য, মাত্র বারো বছর বয়সে ‘জুগনু’ সিনেমার ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি ভাইয়া কী পেয়ারি’ গানটি গাওয়ার মধ্যদিয়ে ১৯৬৪ সালের ২৪ জুন সিনেমার গানে পেশাগতভাবে মনোনিবেশ করেন বাংলাদেশের গর্ব রুনা লায়লা। গানটি লিখেছিলেন তিসনা মেরুতি, কম্পোজ করেছিলেন মানজুর। সেই হিসেবেই আজ তিনি পেশাগতভাবে তার সংগীত জীবনে ষাট বছর পূর্ণ করেছেন। এরপর পাকিস্তানের আরও বহু সিনেমায় রুনা লায়লা প্লেব্যাক করেছেন। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘হাম দোনো’, ‘রিশতা হ্যায় পেয়ার কা’, ‘কমান্ডার’, ‘আন্দালিব’, ‘নসীব আপনা আপনা’, ‘দিল অউর দুনিয়া’, ‘উমরাও জান আদা’, ‘আনমোল’, ‘নাদান’, ‘দিলরুবা’সহ আরও বেশকিছু সিনেমায় তিনি প্লেব্যাক করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের আগেই রুনা লায়লা প্রথম বাংলাদেশের সিনেমায় প্লে-ব্যাক করেন। ১৯৭০ সালের ২৯ মে মুক্তিপ্রাপ্ত নজরুল ইসলাম পরিচালিত সিনেমা ‘স্বরলিপি’তে। এ সিনেমার ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। গানটি লিখেছিলেন গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুর করেছিলেন সুবল দাস। গানে লিপসিং করেছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। প্রথম প্লে-ব্যাকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেন রুনা লায়লা। বাংলাদেশের সিনেমার গানেও তার কণ্ঠের কদর বেড়ে যায়। এরপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এসে তিনি একে একে ‘জীবন সাথী’, ‘টাকার খেলা’, ‘জিঘাংসা’, ‘আলো তুমি আলেয়া’, ‘লাভ ইন সিমলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘কাজল রেখা’, ‘রং বেরং’, ‘দি রেইন’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘সুন্দরী’, ‘দি ফাদার’, ‘কসাই’, ‘দেবদাস’, ‘চাঁদনী’, ‘দোলনা’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্ধপ্রেম’, ‘দোলা’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ‘পাঙ্কু জামাই’, ‘দুই দুয়ারী’সহ আরও বহু সিনেমায় তিনি প্লে-ব্যাক করে শ্রোতাদর্শককে মুগ্ধ করেছেন। বাংলা ভাষায় তার বহু আধুনিক জনপ্রিয় গানও রয়েছে। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘পাখি খাঁচা ভেঙ্গে উড়ে গেলে’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’, ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যের আগে’, ‘ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছো প্রাণ’, ‘শেষ করোনা শুরুতে খেলা’ ইত্যাদি। রুনা লায়লা ‘দি রেইন’, ‘জাদুর বাঁশি’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেবদাস’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’। ‘তুমি আসবে বলে’ সিনেমাতে প্লে-ব্যাকের জন্য সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
এ জাতীয় আরো খবর..