উচ্চ খেলাপি ঋণের ভারে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের ব্যাংক খাত। আর এই খেলাপির সঙ্গে প্রভিশন ঘাটতিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ভালো ও মন্দ ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রভিশন রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে।
ঋণ জালিয়াতি, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বাড়ছে।
কিন্তু সে অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক। ফলে ২০২৪ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংক খাতের প্রাভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন ব্যাংকের যে অবস্থা তাতে প্রভিশন ঘাটতি হবে।
কারণ দিন দিন তো খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সম্প্রতি খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেশি বেড়েছে। তাই প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে।
এখানে শতভাগ প্রভিশন রাখা দরকার। একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত। এভাবে প্রভিশন বাড়তে থাকলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। প্রভিশন ঘাটতি কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।’
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়।
নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রভিশন এবং সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের জন্য লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশনিং আলাদা করে রাখার নিয়ম আছে। প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশনিসংকেত, কারণ এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে, যা মূলত উচ্চ খেলাপি ঋণের ফল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ভালো-মন্দ মিলিয়ে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর এক লাখ ১১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা প্রভিশন হিসেবে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে ব্যাংকগুলো প্রভিশন হিসেবে জমা রাখতে সক্ষম হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে দুই হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
এ জাতীয় আরো খবর..