×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-০৬
  • ৬৪ বার পঠিত
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সংসার চালাতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে গত মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম এবং শিল্প-কলকারখানায় ব্যবহৃত ক্যাপটিভ বিদ্যুতের গ্যাসের দামও চলতি বছর দুই দফায় বাড়িয়েছে সরকার। আসন্ন বাজেটের আগেই বাড়ল ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম।

বছরে বিদ্যুতের দাম চারবার করে বাড়িয়ে আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকার বিদ্যুৎ খাতের সব ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ঋণ কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে দাম বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনছে সরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের এ ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলে কখনোই উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে না। বরং উল্টো মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী না হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যেতে পারে।

তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সর্বশেষ বৈঠকে ভর্তুকি কমাতে আগামী তিন বছরে মোট ১২ বার বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের কথা জানানো হয়েছে। ভর্তুকি কমাতে গত বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) তিন দফায় বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে গত দুই বছরে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম কয়েক দফা বেড়েছে, যার প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি দেশে মূল্যস্ফীতির চাপকে আরো জোরালো করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা।

জানা গেছে, বর্তমানে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি, যা গত এক বছরের বেশি সময় ধরে একই অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০.৭৬ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সর্বশেষ তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৫ শতাংশ, যা গত এক বছর আগেও এর অর্ধেক ছিল।

আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও চলতি অর্থবছরেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে আগামী বাজেট চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন। সম্প্রতি গণভবনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং বিদ্যুৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে অবশ্যই বিদ্যুতের ভর্তুকি সরকারকে দিতে হবে। ভর্তুকি তুলে নিলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। তাই ভর্তুকি তুলে দিতে আইএমএফের যতই চাপ থাকুক না, কোনোভাবেই ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করেই ভর্তুকি উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুতের ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়ে ম. তামিম বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ একটি আওতার মধ্যে আছে, তার মূল কারণ দেশীয় গ্যাস নামমাত্র মূল্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের জন্য যেসব প্রকল্প আছে তার সবগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে আমাদের দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ে।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রথম দফায় প্রভাব ফেলেছিল টাকার অবমূল্যায়ন। বর্তমানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে দ্বিতীয় দফায় মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে বরাদ্দ থাকছে ৩৮৭৯৯ কোটি টাকা

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৮ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৪ হাজার ৩৩৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে চার হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat