প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে মুখোমুখি আইসিসির দুই সহযোগী দল উগান্ডা ও পাপুয়া নিউগিনি। যে জিতবে তারাই পাবে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়ের দেখা। এমন সমীকরণের ম্যাচে খেলতে নেমে ইতিহাস গড়েছে উগান্ডা। বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই জয়ের দেখা পেয়েছে আফ্রিকার দেশটি। ইতিহাস গড়েছেন উগান্ডার অফস্পিনার ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগাও।
১৯৯৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক তার। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে দলের হয়ে তিনি খেলতে নেমেছিলেন, সেই দের অস্তিত্বই আজ আর নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সাতানব্বইয়ের সেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। সেই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে জোর হাওয়া লেগেছিল।
সেই আসরে ১৬ বছর বয়সী ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগা খেলেছিলেন পূর্ব ও কেন্দ্রীয় আফ্রিকা নামের এক দলের হয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো এই দলটাও কোনো একক দেশ ছিল না। আইসিসির সহযোগী সদস্য পদ পাওয়া দলটা গড়া হয়েছিল উগান্ডা, জাম্বিয়ার, তানজানিয়া, মালাউয়ি, ক্রিকেটারদের নিয়ে। দলও বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ক্রিকেট ছাড়েননি এনসুবুগা।
১৯৯৭ সালে এনসুবুগার সঙ্গে সেই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন বাংলাদেশের খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, আকরাম খানরা। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেই কবে ইতি টেনে কেউ এখন কোচ তো কেউ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু ক্রিকেটের মাঠে টিকে আছেন এনসুবুগা। তার দেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অংশ হয়ে গড়েছেন ইতিহাস।
আফ্রিকা অঞ্চলের বাছাই পর্ব পেরিয়ে এবারের বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছিল উগান্ডা। এই যাত্রায় তারা হারিয়েছে জিম্বাবুয়ের মতো দলকে। এরপর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হরেছিল উগান্ডা। সেই ম্যাচে অবশ্য দলে ছিলেন না এনসুবুগা। দলে ফিরলেন পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। আর মাঠে নেমেই গড়েছেন ইতিহাস।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলা সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় এনসুবুগা। ৪৩ বছর বয়সে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেললেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর ২৭ বছর পর অবশেষে একটা স্বপ্নপূরণ হলো তার। আর সেই ম্যাচটাই জয়ে রাঙিয়ে গড়েছেন ইতিহাস। শুধু দলীয় ইতিহাসই নয়, পারফরম্যান্স দিয়ে রেকর্ডবুকে নিজের জন্য একটু জায়গাও বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন এনসুবুগা। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে চার ওভার বল করে ২টি মেডেন ওভারসহ মাত্র ৪ রান দিয়েছেন এই অফস্পিনার। উইকেটও নিয়েছেন দুটি। বিশ্বকাপে পূর্ণ চার ওভার বল করে এর চেয়ে কম রান দেয়ার রেকর্ড নেই আর কারোরই। শুধু কী তাই, এই ২৪ বলের মধ্যে ২০টিই ছিল ডট বল। এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি ডট বলও করতে পারেননি আর কোনো বোলার।
এনসুবুগা অবশ্য শুধু ক্রিকেটই খেলেন, তাও নয়। তিনি হকি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, ভলিবলও খেলেন। এই সঙ্গে হ্যান্ডবল আর ফুটবলটাও ভালোবাসেন। সব খেলার মধ্যে ক্রিকেটটাই তিনি সবার শেষে শুরু করেছেন। ভয় কাটাতে টেনিস বলে শুরু করার পর এক সময় ভালোবেসে ফেলেছেন খেলাটাকে।
কাম্পালায় জন্ম নেয়া এনসুবুগাই তার পরিবারের একমাত্র ক্রিকেটার নন, বরং তার পরিবারকেই ক্রিকেট পরিবার বলা চলে। উগান্ডা জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলছেন তার ভাই রোজার মুকাসাও। আরেক ভাই লরেন্স সেমাতিম্বাও এক সময় খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে।
ক্রিকেটের অখ্যাত দেশের অখ্যাত এনসুবুগার জন্য বিশ্বকাপ খেলাটাই স্বপ্নপূরণ। তবে এখনো তৃপ্ত নন তিনি। বিশ্বকাপে দুজন বিশেষ খেলোয়াড়ের উইকেট শিকার করতে চান তিনি। ক্যারিবিয়ান দানব আন্দ্রে রাসেল ও নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনের উইকেট দুটি পেলে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ হয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন এই চিরতরুণ।
এ জাতীয় আরো খবর..