দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান প্রবাসীদের। তবে বাজেটে এর প্রতিফলন নেই। বরাদ্দে বরাবরই পিছিয়ে অভিবাসন খাত। কর্মী প্রশিক্ষণের জন্যেও নেই আলাদা বরাদ্দ। বিশ্লেষকরা বলছেন, যতদিন যাচ্ছে ততই অদক্ষ কর্মীর চাহিদা কমছে। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। সে কারণেই গবেষণা এবং দক্ষতা উন্নয়নে আলাদা বরাদ্দ থাকা দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার দাবিও তাদের।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, সোয়া এক কোটি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বছরে গড়ে ২২ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান এসব প্রবাসীরা। তাদের পাঠানো অর্থের ওপরে ভর করেই শক্তিশালী অবস্থানে দেশের অর্থনীতি। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান ১০ শতাংশের বেশি। ডলার সংকটের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন প্রবাসীরা।
জাতীয় বাজেটের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থের যোগান দেন প্রবাসীরা। সেই বাজেটেও গুরুত্ব নেই তাদের। অর্থ বরাদ্দে সবচেয়ে পিছিয়ে অভিবাসন খাত। বাজেটের আকার বাড়লেও বাড়ে না এ খাতের বরাদ্দ। শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে এ খাতের বরাদ্দ। শ্রমবাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে গবেষণা এবং প্রশিক্ষণে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের। পাশাপাশি বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় প্রবাসী পরিবারকে অন্তর্ভূক্ত করার পরামর্শও তাদের।
বিষয়টি নিয়ে অভিবাসন বিশ্লেষক আসিফ মুনীর বলেন, বিশ্বের শ্রমবাজার একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার। কাজেই যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা যদি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি না হন তাহলে টিকতে পারবেন না।
শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের অধিকাংশ কর্মীই শ্রমিক হিসেবে প্রবাসে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে কিন্তু এখন শ্রমিকের চাহিদা কমে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের দক্ষ ম্যানপাওয়ার তৈরি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ এবং তার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট। এখাতের জন্য বরাদ্দের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটিও নজরদারি রাখার পরামর্শ তার।
তিনি আরও বলেন, সরকার কোন খাতে বরাদ্দ দিচ্ছে না? সবখাতেই বরাদ্দ দিচ্ছে। তাহলে প্রবাসীরা এতো উপেক্ষিত কেন থাকবে? তার দাবি, নতুন বাজেটে প্রবাসীদের জন্য ৫ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হবে।
তবে কোনো অবস্থাতেই প্রবাসী আয়ের ওপর কর আরোপ করা ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য বিশ্লেষকদের। তাহলে বৈধ পথের বদলে হুন্ডির ব্যবহার বাড়বে বলেও মনে করেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে আসিফ মুনীর বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে সহজেই লেনদেন করা যায় বলেই তারা হুন্ডিতে ঝুঁকছে। লেনদেনে প্রণোদনা থাকলে হুন্ডি কমবে। দেশের স্বার্থেই এবং সরকারের স্বার্থেই প্রবাসীদের আয়কে করের বাইরে রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এর মধ্যে যদি এখাতে কর আরোপ করা হয় তাহলে দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে নিরুৎসাহিত হবেন প্রবাসীরা।
এ জাতীয় আরো খবর..