×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-০২
  • ১১১ বার পঠিত
ফরিদপুরের নগরকান্দায় সরকারি ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৮২বছর বয়সী বৃদ্ধা এক ভিক্ষুকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

ভিক্ষা করে জমানো টাকা দিয়েও ঘর না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে না খেয়ে জীবন পার করছেন বৃদ্ধা কুটি খাতুন। এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধা কুটি খাতুন। স্বামী ইউসুফ মাতুব্বর মারা গেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। দুই ছেলেকে ভিক্ষা করে মানুষ করেছেন তিনি। তবে ছেলেরাও বড় হয়ে তাকে ফেলে রেখে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছেন। ভাঙা বাড়িতে একাই থেকে যান কুটি খাতুন। শুরু হয় নতুন করে তার জীবনযুদ্ধ। আবার ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন তিনি। এভাবেই প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে যা পান, তা দিয়েই কোনদিন খেয়ে আবার কোনদিন না খেয়ে চলে তার দিনযাপন।
 
নগরকান্দা উপজেলার বড় শ্রীবরদী গ্রামে স্বামীর রেখে যাওয়া এক টুকরো ভিটাতে সরকারি ঘর পাওয়ার আশায়, দুই বছর আগে ভিক্ষা করে জমানো পনের হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। তবে দুই বছর কেটে গেলেও মিলেনি কাঙ্খিত সেই ঘর। এমনকি ফেরতও পাননি সেই কষ্টার্জিত অর্থ বলে জানা গেছে। এখন বিচার দিচ্ছেন আল্লাহর কাছে তিনি।

ভিক্ষার অর্থ দিয়ে ঘর না পেয়ে, এখন বিচার দিচ্ছেন আল্লাহর কাছে কুটি খাতুন। ছবি: সময় সংবাদ 

বৃদ্ধার অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সাহেব ফকির তার কাছ থেকে সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নিয়ে এখনও বুঝে পাননি সেই ঘর।
 
ভুক্তভোগী কুটি খাতুন  সময় সংবাদকে  
 
বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার স্বামীকে হত্যা করে পাকবাহিনী। দুই ছেলেকে ভিক্ষা করে বড় করেছি। ছেলেরাও জীবিকার তাগিদে চলে যায় অন্যত্র। আবার ভিক্ষা শুরু করি। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে প্রতিদিন যা পাই, তা দিয়েই কোনো রকমে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি।

তিনি আরও বলেন, 
 
ভিক্ষার টাকা জমিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। চেয়ারম্যান বলেছিল একটি সরকারি ঘর দিবে, সেজন্য সে টাকা নেয়। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেল টাকাও ফেরত দেয় না, ঘরও দেয় না। অনেকবার তার কাছে গেছি, শুধু ঘুরায়। এখন শরীর অনেক খারাপ, ভিক্ষা করতে পারি না। তাই একবেলা খেতে পায়, অন্যবেলায় খেতেও পাই না।
 
প্রতিবেশী আছমা আক্তার বলেন, সরকারি ঘর পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন কুটি খাতুন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। তিনি আমাদের কাছে বলেছেন ঘরের জন্য চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছেন। এখন টাকাও ফেরত পাচ্ছে না, ঘরও পায়নি।
 
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য নাছির খান বলেন, 
 
কুটি খাতুন আমার কাছে এসেছেন একাধিকবার। তিনি এসে বলেছেন চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছেন ঘর পাওয়ার জন্য। টাকাও ফেরত পাচ্ছে না, ঘরও পাচ্ছে না। কুটি খাতুন ভিক্ষাবৃত্তি করেই এ টাকা চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন। আমি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালে তিনি গুরুত্ব দেননি।
 
অভিযুক্ত চরযশোরদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান সাহেব ফকির সরকারি ঘর দেয়ার বিনিময়ে অর্থ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ভিক্ষার টাকা জমিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি, বললেন  কুটি খাতুন। ছবি: সময় সংবাদ
 
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে আমার কথা বলে একজন নারী ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছিলেন, যা ফেরত দেয়া হয়েছে।
 
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির বলেন, 
 
সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে অর্থ নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পেলে অবশ্যই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 
অসহায় এ বৃদ্ধা ভিক্ষুকের টাকা আত্মসাৎকারী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরাসরি কেউ কথা বলার সাহস না পেলেও এ ঘটনায় তীব্র নিন্দার ঝড় বইছে উপজেলা জুড়ে। এমনকি চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেছেন অনেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat