চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাতিল করে এই রুটে জনপ্রিয় এই ট্রেনসেবা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। অন্যথায় যাত্রীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব কথা জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার রেলসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণ করেছে।
রেল কর্তৃপক্ষ শুধু রাজধানীবাসীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার দুটি ট্রেন সার্ভিস চালু করে। কিন্তু চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জনগণ জমিজমা, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নদী-নালা, খাল-বিল বিলিন করে রেলপথের জন্য জায়গা ছেড়ে দিলেও এই ট্রেন সার্ভিস চালুর পর তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির মুখে গত ঈদুল ফিতরের সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে কক্সবাজার স্পেশাল নামে একটি ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সড়কপথে নৈরাজ্য, সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের হাত থেকে বাঁচতে যাত্রীরা সীমিত সুবিধার এই ট্রেনটির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। এরপর অল্প সময়ে ট্রেনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে যাত্রীবান্ধব বাহনে পরিণত হয়। তাই ঈদের পর নির্ধারিত সময়ে বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় রেল প্রশাসনের মাঠ জরিপ প্রতিবেদনের কারণে ট্রেনটি চলাচলের সময়সীমা দুই দফা বাড়ানো হয়। আর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীরা এই ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করায় বাস মালিকদের পরিবহনে যাত্রীসংকট দেখা দেয়।
তখন তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীপ্রতি বাসভাড়া এক শ টাকা পর্যন্ত কমাতে বাধ্য হয়। তারপরও বাসে যাত্রী না পাওয়ায় বাস মালিকরা রেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ফেলেছে বলে এই রুটে যাত্রীদের অনেকেই মনে করেন। তাই বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের জনপ্রিয় ট্রেন সার্ভিস কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, দেশের আন্ত নগর ট্রেন সার্ভিসগুলোর মধ্যে অন্য আন্ত নগর ট্রেনের তুলনায় ঢাকা-কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রী অকুপেন্সি বেশি এবং আয়ও বেশি। এ ছাড়া ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিমিত এই রেলপথে কয়েক জোড়া রেল চালানো না গেলে বিনিয়োগের কিস্তি ওঠানো সম্ভব হবে না।
এতে রেল কর্তৃপক্ষের লোকসানের বোঝা দিন দিন ভারী হয়ে উঠবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলপথে দুটি আন্ত নগর ট্রেনে চট্টগ্রামের যাত্রীদের আন্দোলনের মুখে মাত্র একটি এসি ও একটি নন-এসি দুটি কোচ বরাদ্দ রাখা হলেও এতে যাত্রীদের চাহিদার সিকিভাগও পূরণ হচ্ছে না। এতে করে এই পথের যাত্রীদের ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে কোরবানি ঈদের আগে কক্সবাজার রুটে চলমান স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ায় রেলপথমন্ত্রীর ঘোষিত ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গত ২৮ মে রেলপথমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ঈদুল আজহায় ১০ জোড়া ঈদ স্পেশাল বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেন। এই ঘোষণায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া বিশেষ ট্রেন সার্ভিসও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে স্পষ্টত বোঝা যায়, রেলওয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের আকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে শুধু বাস মালিকদের লাভবান করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অনতিবিলম্বে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার যাত্রীসাধারণকে সরকারের অনন্য অবদান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপরিষেবা গ্রহণের সুযোগ দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..