অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ ও মজুদ বাড়াতে সুবিধা দেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠাতে আরো বেশি উৎসাহিত করতে বাড়বে আর্থিক প্রণোদনা। আগামী অর্থবছরে রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনা বরাদ্দের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়ানো হতে পারে। বিকল্প প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে বিদ্যমান আর্থিক প্রণোদনা ২.৫ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা এবং অ-আর্থিক প্রণোদনা দিতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা থাকতে পারে।
কমিটির সুপারিশগুলো বিবেচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলমান ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হলো প্রত্যাশার চেয়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসা। বৈধ পথের তুলনায় হুন্ডিতে আসা রেমিট্যান্সে বেশি টাকা পাওয়া যায়, এ কারণে হুন্ডি বেড়েছে। রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৯ টাকা ৯৩ পয়সা দিচ্ছে সরকার।
কিন্তু হুন্ডিবাজারে আরো বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই প্রণোদনা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠালে বর্তমানে আড়াই শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়। হুন্ডি রোধের মাধ্যমে বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আনতে আগামী অর্থবছরে প্রণোদনা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার প্রাক্কলন করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল।
এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আড়াই বছর ধরে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে ডলারের দর ১১৭ টাকা। কোনো প্রবাসী দেশে বৈধ পথে এক ডলার পাঠালে, বাড়তি আড়াই শতাংশসহ তাঁর পরিবার ১১৯ টাকা ৯৩ পয়সা পাচ্ছে। বাড়তি টাকা সরকার ভর্তুকি বাবদ দেয়।
সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত রেমিট্যান্স মেলায় বলেন, যাঁরা বৈধ পথে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠাবেন, তাঁদের জন্য ‘রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা থেকে ৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব তাঁর মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপন করার আশ্বাস দেন।
সম্প্রতি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে সরকার প্রণোদনায় জোর দিচ্ছে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বৈধ পথে দেশে পাঠাতে সরকার আরো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।
গত ২৪ এপ্রিল কমিটি এ বিষয়ে বৈঠক করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্য অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, এ কে এম সেলিম ওসমান ও রুনু রেজা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, সভায় বৈধ পথে, অর্থাৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা শেষে ১৩ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে—প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের একটি ডাটাবেইস তৈরি করে তাঁদের স্মার্ট কার্ড প্রদান করা এবং ২.৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আরো রয়েছে—প্রবাস আয় বাড়াতে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অ-আর্থিক প্রণোদনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন; রেমিট্যান্স প্রেরণকারী এবং তাঁদের পরিবারের জন্য বিশেষ স্মার্ট কার্ড দেওয়া, যা নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে; স্মার্ট কার্ডধারীর মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানদের সরকারি হাসপাতালে বিশেষ প্রাধিকার দেওয়া।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শ এবং দেশের রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আনার জন্য এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।
এ জাতীয় আরো খবর..