বিশ্বে কর-জিডিপি অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় আছে বাংলাদেশ। তাই কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে থাকছে রাজস্ব আয় বাড়ানোর ছক। রাজস্ব আয় বাড়ানোর সম্ভাব্য খাতে রয়েছে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারও। শেষ পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন করা হলে ইন্টারনেটভিত্তিক কাজকর্ম ও ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করতে লোকের ব্যয় বাড়বে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিভিন্নমুখী উদ্যোগের মধ্যে স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করার পরিকল্পনা হয়েছে। পাশাপাশি সিগারেট এবং মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জুনে বাংলাদেশকে প্রদেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে। এর শর্ত অনুযায়ী কর অব্যাহতি হ্রাস, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, ভর্তুকি ‘যৌক্তিক করার’ কৌশল এবং খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা করবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি।
২৮ জুন এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
এনবিআর সূত্র জানায়, মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের জুন নাগাদ যেসব স্থানীয় শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোকে নতুন করে সুবিধা দেওয়া হবে না। সরকারের আয় বাড়াতে ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে প্রথমবার মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়।
শুল্কের হার প্রথমে ৫ শতাংশ করা হলেও বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরে তা কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। এরপর তা কয়েক দফায় বাড়িয়ে ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ করা হয়।
বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়।
আসন্ন বাজেটে আরো ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তাহলে ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল সেবার দাম বাড়তে পারে।
বর্তমানে একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৮৩ টাকার কথা বলতে পারেন। সরকারকে দিতে বাকি ১৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। মোবাইল সেবায় ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ভোক্তারা ১০০ টাকা রিচার্জ করে ৭৮ টাকার কথা বলতে পারবেন। একইভাবে ইন্টারনেট খরচও বাড়বে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে মোবাইল ফোনে কথা বলতে ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়বে। তবে দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মোবাইল ফোন যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁদের জন্য এই খরচ খুব বেশি না। জনগণের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বাজেটে নেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ সবার জন্য একটি অপরিহার্য সেবা। টেলিযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং তথ্যের অভিগম্যতা দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই খাতে কর বৃদ্ধি দেশের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা আশা করি, সরকার স্বল্পমেয়াদি করনীতির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা বিবেচনা করবে।’
এ ছাড়া আগামী বাজেটে স্থানীয় ও আমদানি করা উভয় ধরনের মোবাইল ফোনের ওপর করের হার বাড়তে পারে। বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন উৎপাদনে সব মিলিয়ে ২৬ শতাংশ ও আমদানি করা মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে স্থানীয় কম্পানিগুলো মোবাইল ফোনের চাহিদার ৯৭ শতাংশই জোগান দিচ্ছে। ২০২১-২২ সালে এ খাতে অনেক বিনিয়োগ এসেছে উল্লেখ করে তাঁরা বলছেন, নতুন করে ভ্যাট আরোপ করলে এসব বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..