বলা হচ্ছে এবারের আইপিএল ফাইনালটা হয়েছে সবচেয়ে একপেশে। বলা হবেই-বা না কেন! আইপিএল ইতিহাসে এবারের ফাইনালই যে দেখেছে সবচেয়ে কম রানের ইনিংস। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে মাত্র ১১৩ রানেই অলআউট হয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। যার জবাবটা মাত্র ১০.৩ ওভারেই দিয়েছে শ্রেয়ার আইয়ারের দল।
আইপিএল ফাইনালে এর আগে সর্বনিম্ন রান হয়েছিল ২০১৩ সালে। ওই আসরের ফাইনালে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে রান তাড়া করতে গিয়ে ১২৫ রান করেছিল চেন্নাই সুপার কিংস। হায়দরাবাদ তাদের ছাড়িয়ে গেল, একই সঙ্গে আরেকটি লজ্জার রেকর্ড গড়েছে তারা। ফাইনালে এর আগে শুরুতে ব্যাট করা দল কখনও অলআউট হয়নি, কলকাতার বিপক্ষে প্যাট কামিন্সের দল হারিয়েছে সব কটি উইকেট। অথচ কলকাতা মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে।
ব্যাটিং নেয়ার সিদ্ধান্ত
চেন্নাইয়ের মাঠে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হায়দরাবাদ। সেটিই হয়তো তাদের প্রথম ভুল ছিল। শ্রেয়ার আইয়ারের বক্তব্য আমলে নিলে এই আন্দাজ সঠিক বলেই ধরে নিতে হয়। ম্যাচশেষে কলকাতা দলপতি বলেন, ‘আগে বল করার সুযোগ পেয়ে আমরা ভাগ্যবান। আর প্রত্যেকটা জিনিস আমাদের অনুকূলে ছিল।’
চিপকের উইকেট প্রথম দিকে কঠিনই ছিল! ফলে তাল সামলাতে পারেননি হায়দরাবাদের ব্যাটাররা। অথচ কলকাতার ইনিংসে উইকেটের চরিত্র বদলে যায় পুরো ১৮০ ডিগ্রি। ট্রাভিস হেড-অভিষেক শর্মারা যেখানে দাঁড়াতেই পারেননি, সেখানে তাণ্ডব চালান ভেঙ্কাটেস আইয়ার ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। হায়দরাবাদ আগে বোলিং নিলে কলকাতার মতো সুবিধা কিংবা শিরোপা পেত না- তার গ্যারাটিন্ট কে দিতে পারে!
‘প্রয়োজনে উইকেট যাক, তবুও মারো’, এবারের আইপিএলে হয়তো এমন নীতিই ছিল হায়দরাবাদের। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া পুরো আসরজুড়ে তা বাস্তবায়নও করে প্যাট কামিন্স বাহিনী। ফলস্বরূপ গ্রুপপর্বে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুটি ইনিংস (২৮৭ ও ২৭৭) খেলার নজির গড়ে তারা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৬৬ রানও এই আসরেই করেছে ড্যান ভেট্টরির শিষ্যরা।
হায়দরাবাদের ‘প্রয়োজনে উইকেট যাক, তবুও মারো’ নীতি কাজে আসেনি ফাইনালে। ২১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় তারা। ওই পরিস্থিতিতে চিপকের কঠিন উইকেটে চাহিদা অনুযায়ী কারো ধরে খেলা হতে পারত বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু হায়দরাবাদ সে পথে হাঁটেনি। ফলে ইনিংসও গুটিয়ে যায় ১১৩ রানে।
হায়দরাবাদের ওপেনারদের ব্যর্থতা-স্টার্কের ফর্ম
১৭তম আসরের বিধ্বংসী ওপেনার- বাক্যটা ভালোভাবে যায় ট্রাভিস হেড ও অভিষেক শর্মার সঙ্গে। এই দুই ওপেনার দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে এবার পাওয়ার প্লেতেই ১২৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন। মিডলঅর্ডারে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাট করেছেন বিস্ফোরক হেইনরিখ ক্লাসেন। পুরো আসরে এ তিনজনের কাঁধেই চড়েছে হায়দরাবাদ। তারা পুরো আসরে হায়দরাবাদ যে ৩০৫২ রান করেছে, তার ১৫৩০ রানই এসেছে অভিষেক-হেড-ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। ফাইনালে এই তিনজনই ব্যর্থ হয়েছেন, যা ফাইনাল একপেশে করে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় সহায়ক। হেড ০, অভিষেক ২ ও ক্লাসেন ১৬ রান করেন।
এগুলোর সঙ্গে যোগ হয়েছিল মিচেল স্টার্কের ফর্ম। আসরজুড়ে কলকাতার অন্যরা ভালো করলেও গ্রুপপর্বে স্টার্ক শুধু ধুকেছেনই। কোনো কোনো ম্যাচে ৫০ বা তার বেশি রানও দিতে দেখা গেছে ২৪ কোটির বোলারকে। তিনি স্বরূপ দেখিয়েছেন প্লে-অফে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ম্যাচসেরার পুরস্কার ভাগিয়ে নেয়ার পর ফাইনালে ছিলেন আরও আগুন। মাত্র ১৪ রান দিয়েই নেন ২ উইকেট, হন ম্যাচসেরাও। পাশাপাশি অন্য বোলাররা নিজেদের নিয়মিত বোলিংটা করে হায়দরাবাদকে চেপে ধরেন।
চিপকের কঠিন উইকেট
এবারের আইপিএলে প্রায় প্রতিটি ভেন্যুতে রানবন্যা হয়েছে। ব্যতিক্রম ছিল চিপকের উইকেট। এখানে তুলনামূলক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে ব্যাটারদের। যা হায়দরাবাদের ‘প্রয়োজনে উইকেট যাক, তবুও মারো’ নীতির একেবারে পরিপন্থী। কঠিন পিচে এই নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে কেবল উইকেটই গেছে, হায়দরাবাদ সেভাবে মারতে আর পারেনি।