রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা যেন শাপেবর হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে দেশটির অর্থনীতি পঙ্গু করার জন্য একের পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ। দেশটির ডলার রিজার্ভ জব্দ করার পাশাপাশি পশ্চিমা কম্পানিগুলো রাশিয়া ছেড়ে আসে। কিন্তু এরপর সাময়িক অস্বস্তিতে পড়লেও আবারও ঘুরে দাঁড়ায় রাশিয়ার অর্থনীতি।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরও নতুন উচ্চতায় রাশিয়া-চীন বাণিজ্য
কারণ প্রকৃত বন্ধুর মতোই পাশে এসে দাঁড়ায় চীন। বিশেষত তারও আগে থেকে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত চীন। যে যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে পশ্চিমা তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো ঘনীভূত হয়েছে।
দেশ দুটির মধ্যকার বাণিজ্য রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে; রাশিয়া চীন থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম কিনেছে এবং বিনিময়ে চীনের ক্রেতারা ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়ার জ্বালানি তেল ব্যবহার করছে। এই বাস্তবতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সপ্তাহে আবারও চীন সফরে গেছেন।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে মোট চারবার দুই নেতার সাক্ষাৎ হলো। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে শি চিনপিং ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে দুই নেতার মোট ৪৩বার সাক্ষাৎ হয়েছে।
বিশ্বের আর কোনো ক্ষেত্রে এমন নজির দেখা যায় না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে পুতিনের ফোনে আলাপ হয়েছে মাত্র একবার।
রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা মূলত দেশটির যুদ্ধ করার সক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাশিয়া নানাভাবে এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করছে। ২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৬ শতাংশ; এটা রুশ সরকারের তথ্য নয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এই তথ্য জানিয়েছে।
যদিও আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দেশটির অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছিল।
২০২৪ সালেও রাশিয়ার ভালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইএমএফের পূর্বাভাস, চলতি বছর রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২.৬ শতাংশ; যদিও দেশটির সরকারের পূর্বাভাস, প্রবৃদ্ধি হবে ২.৩ শতাংশ।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন এসেছে, তা হলো রাশিয়া কার সঙ্গে বাণিজ্য করবে, তার সেই অগ্রাধিকারে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। চীন তাদের বড় অর্থনৈতিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা ছিল, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে। কিন্তু তার আগেই ২০২৩ সালে তা ২৪ হাজার কোটি ডলারে উঠে যায়। এই পরিস্থিতিতে চীন এখন রাশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার।
সূত্র : সিএনএন বিজনেস
এ জাতীয় আরো খবর..