×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-২০
  • ৫৯ বার পঠিত
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ১১৬ বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি জানায়, প্রতি চারজন প্রার্থীর মধ্যে একজন ঋণগ্রস্ত। এ ছাড়া ১৩.১৩ শতাংশ প্রার্থী বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের আয় ও সম্পদ দ্রুত বেড়েছে।

শুধু তাঁদের নিজেদেরই নয়, স্ত্রী এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে টিআইবি।

টিআইবি জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট প্রার্থী এক হাজার ৮১১ জন। এই ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থনপুষ্ট।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একদলীয় প্রভাব রয়েছে। বেশির ভাগ প্রার্থী এক দলের। এটাকে সুস্থ গণতন্ত্র বলা যায় না।

এটি রাজনৈতিক আদর্শের কোনো প্রতিযোগিতা নয়, ক্ষমতার দ্বন্দ্বের প্রতিযোগিতা। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায়ও কম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নারী প্রার্থী আছেন মাত্র ২৪ জন। জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ শতাংশ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিতীয় ধাপেও লড়ছেন বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীরা। যদিও দলের নির্দেশ না মেনে বহিষ্কৃত হয়েছেন ৬৪ জন প্রার্থী। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে রাজনৈতিক লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দলগত অবস্থান প্রায় শূন্য। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে প্রথম ধাপের তুলনায়। দ্বিতীয় ধাপের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন রয়েছেন ১৭ জন। আর অতীতে ক্ষমতায় থাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট লক্ষ করা গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৪৬২ জন প্রার্থী ঋণগ্রস্ত। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৩৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৬৭ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান ৬০ জন রয়েছেন। গত পাঁচ বছরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর আয় বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজার শতাংশ। স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ।

টিআইবি জানায়, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০.৫১ শতাংশ ব্যবসায়ী। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৮.৭৩ শতাংশ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৯.২৬ শতাংশ ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫১.৬৩ শতাংশ নিজেকে গৃহিণী এবং গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। ওই প্রার্থীদের ১৪.৫৫ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা থেকে। কৃষি থেকে আয় আসে ১৬.২৫ শতাংশের, আয় নেই ১০.৯২ শতাংশের, ৪৭ শতাংশ নিজেদের আয়ের কোনো স্বীকৃত উৎস দেখাননি। সার্বিকভাবে প্রার্থীদের ৪২ শতাংশ আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাঁদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চেয়ারম্যান ও অন্য প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আয়বৈষম্য লক্ষ করা গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২১ শতাংশের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, যেখানে অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা ৫৩ শতাংশ। একইভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২৩.৬২ শতাংশের আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার ওপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ ২১ মে। এই ধাপে দেশের ১৫৭ উপজেলায় ভোট নেওয়া হবে। গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট নেওয়া হয়। তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোট নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat