×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-১৭
  • ৫৬ বার পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা। এর থেকে উত্তরণ করতে হলে ভেবেচিন্তে গভীরে গিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন। এবং এই সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। না হলে ব্যবসায়ীদের আস্থা থাকবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘কেমন বাজেট চাই’অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাবেক এ গভর্নর এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ব্যাংক সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে বলা যাবে না। তবে সরকারি বাজেট এবং যে কোন কোম্পানির বাজেটের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সরকারি বাজেট সরকারের আয়-ব্যয় ছাড়াও প্রাইভেট সেক্টর এবং ব্যক্তিগত সেক্টরে ইফেক্ট ফেলবে।

এই দৃষ্টিতে কিন্তু বাজেটটা দেখতে হবে। মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে এখন মানুষের জীবিকার সংগ্রাম আসতে আসতে পলিসি মেকারদের আড়ালে চলে যাচ্ছে। ইনফ্লেশন নিয়ে কথা হচ্ছে, ইনফ্লেশন না এটা সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপাটা আসছে। 
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, বাজেটে সামাজিক উন্নয়ন ও মূল্যস্ফীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, কয়েকটা বড় ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া আমাদের ওইরকম বড় শিল্প গড়ে ওঠেনি। আমরা হংকং হতে পারব না, সিঙ্গাপুরও হতে পারব না। সুতরাং সার্ভিস সেক্টর আমরা এগোতে পারবো না। সুতরাং আমাদের শিল্প খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। ছোট ও মাজারের শিল্পকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

যেখান থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাজেটের পলিসি হতে হবে জনবান্ধব এবং শিল্প বান্দর।
তিনি বলেন, আমার বক্তব্য হচ্ছে শিল্পের পথের কাঁটাগুলোকে সরিয়ে দিতে হবে। কেউ যদি শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে যায় তাকে প্রতিষ্ঠান গড়া সহজ করে দিতে হবে। আমাদের এখানে প্রতিটি ঘরে প্রতিটি চেয়ারে এবং প্রতি টেবিলে টাকা দিতে হয়। তাই বিদেশী বিনিয়োগ আসে না। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে এই অবস্থার উন্নতি করতে হবে। 

সালেহ উদ্দিন বলেন, ব্যাংক হাতের সমস্যাগুলো অজানা নয়। আর সমাধানও অজানা নয়। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরো শক্ত হতে হবে এবং আরো কঠোর হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা। আজকে এক সিদ্ধান্ত আবার কয়েকদিন পর আরেক সিদ্ধান্ত। এর থেকে উত্তরণ করতে হলে ভেবেচিন্তে গভীরে গিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন। এবং এই সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। না হলে ব্যবসায়ীদের আস্থা থাকবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর। বাজারেরও আস্থা থাকবে না। এতে সবকিছুই লাগাম ছাড়া হয়ে পড়বে। এজন্য মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতির সমন্বয়ের বিকল্প নেই।

২০২১-২২ এ আমাদের চাহিদা থাকার পরও টাকার দর ধরে রাখা হয়েছিল। এতে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। টাকার দর এখন একসাথে অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে করতে হয়েছে। তাহলে আমাদের ১২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে লাভটা হল কি? এটা কি ভাল ডিসিশন ছিল? মোটেও না। আমার মনে হয় যারা পলিসি মেকার তাদেরকে এই বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমাদের যে বাজেট দেয়া হয় তার মধ্যে ৬০ ভাগই অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর বরাদ্দ রাখা হয়। যেখানে ৩০ শতাংশ ই অতি মূল্যায়িত হয়। আওয়ামী লীগের ইস্থার ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ রাখার কথা হয়েছিল তা অর্ধেক বাস্তবায়ন হয়নি। এক কথায় সরকার মুখে যেটা বলে সার্বিকভাবে অনেক ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়িত হয় না। 

তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা জবাবদিহিতা। আমাদের কোন ক্ষেত্রেই জবাব দিতে নাই। তাই জবাবদিহিতা দরকার। একদিকে ট্যাক্স দিব না, একচেঞ্জ রেট ঠিক করবো না সুদের হার ঠিক করবা না। কিন্তু দুবাইতে ৩৪৯ জনের সম্পদ বাড়বে। এজন্য তো ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করিনি।

এ মুহূর্তে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দেশ। আমাদের অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে আরও এক বড় সমস্যা হলো প্রকৃতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। সরকারের অর্থনীতিতে সমস্যা হলো রাজস্ব বাড়েনি। এ মুহূর্তে সরকারের খরচ বাড়ানোর কোন অবস্থা নেই। বিদেশি ঋণ শোধ করার মতো অবস্থা নেই।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের রাজনীতি যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে শরীরে অন্যান্য জায়গায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। গতবার থেকে এবার কী এসেছে। আপনারা যদি দেখেন গত ১০ বছরে আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে রাজস্ব সেভাবে বাড়েনি। আজকে যদি করোনার কথা বলেন, তাহলে অর্থনীতির বিবেচনা ঠিক হলো না।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গতবার আমি যখন আলোচনা করেছি তখন আমি বলেছি এবং যা কথাগুলো বলবো আইএমএফআইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, আমাদের সাথে অনেক সময় আইএমএফআইয়ের সাথে মিলবে না, কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদের মধ্যে আমরা মোটামুটি একটা ঐক্যমতে এসেছি। সেটা হলো মূল্যস্ফীতি ও সমষ্টিক অর্থনীতির। এটা আমরা যেভাবে বলি না কেন, এটা বিনিময় হার দিয়ে বলি, পণ্য মূল্য দিয়ে বলি অথবা সুদের হার দিয়ে বলি। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতীশীলতা ১ নম্বর বিষয় হিসেবে সবার কাছে প্রতিপালিত হবে। কারণ এটা অনেকটা শরীরে ডায়েবেটিকের মত। 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত ১৫ বছরের হিসেব যদি ধরেন, তাহলে এত জটিল ও আর্থিক বাজেট হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। এই জটিল আর্থিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে কারণ হলো আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে। সেটা আপনি পণ্য মূল্যই বলেন আর বাজারে মন্দার কথাই বলেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে আবহাওয়াগত কারণে। আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি এটা অর্থনীতির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিয়ে এসেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat