বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে বিভিন্ন আচরণ করেছিল, এটি দুই দেশের মধ্যে ‘তিক্ততার’ বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (১৫ মে) মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের আগে তিক্ত সম্পর্ক হয়েছিল, ডোনাল্ড লু’র সফরের ফলে তেমন পরিবেশ আর থাকছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘এটি আপনার ভাষায় তিক্ততার সম্পর্ক, আমি সেটি এভাবে দেখতে চাই না। কারণ বিভিন্ন দেশের নানান কনসার্ন থাকে, তারা সেই কনসার্নগুলো ব্যক্ত করেছিল। দেশে অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি ৪২ শতাংশ ছিল। আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। এমনকি মন্ত্রীও পরাজিত হয়েছেন। সে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি একমত হয়েছেন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতো চাই।’
তিনি আরও জানান, ভিসানীতি ইজ ডরমেন্ট (সুপ্ত) নাও। সুতরাং এটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। এছাড়া র্যাব, শ্রম আইন ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। সেটি আমাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। এটি প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে এর প্রক্রিয়াটি একটু লম্বা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে বলেও জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তিনি সম্পর্ককে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিণ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। আমাদের আলোচনা সেই লক্ষ্যেই হয়েছে। একক দেশ হিসেবে আমাদের রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র। আমি ডোনাল্ড লু-কে অনুরোধ জানিয়েছি, বাংলাদেশে ৪০টি আইটি ভিলেজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে যাতে যুক্তরাষ্ট্র যাতে বিনিয়োগ বাড়ায়। যদিও কিছু বিনিয়োগ তারা এরইমধ্যে করেছে।
তিনি আরও বলেন, লু বলেছেন আমাদের ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য। যেই জিএসপি সুবিধা আমরা আগে পেতাম এখন পাইনা, সেটি তারা ফিরিয়ে দিতে চায়। রিইন্ট্রিডিউস করলে তারা জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশকে আবার দিতে চায়। তবে সেটি এখনও রিইন্ট্রিডিউস হয়নি। সেজন্য আমাদের লেবার পলিসিটা একটু রিভিউ করতে হবে, যেটি আমরা রিভিউ করছি। সেটি নিয়ে গতকাল আইনমন্ত্রীর সাথে তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের রিজার্ভ শক্তিশালী করতেও সহায়তার কথা জানিয়েছেন ডোনাল্ড লু। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ডেভলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে চায়। একইসঙ্গে আমাদের ট্যাক্স সিস্টেমকে আধুনিক করার জন্য আমাদের সহায়তা করতে চায়। ট্যাক্স ফাঁকি যেটি দেয়া হয়, সেটি যেন করতে না পারে সেজন্য তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়।’
ড. হাছান বলেন, এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের সহায়তা চেয়েছি। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক বিস্তৃত করার জন্য তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করেছি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির বিষয়েও কথা হয়েছে জানিয়ে ড. হাছান বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে আরো ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, পড়াশোনা করতে পারে এবং নারীর ক্ষমতায়নে তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমি একটি প্রস্তাব দিয়েছি যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যেন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এস্টাবলিশ্ড করা হয়।
এ জাতীয় আরো খবর..