ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি গরুর সমারোহে কোরবানির হাটগুলো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ক্রেতা সাধারণের নজর কাড়ে মোটাতাজা, নাদুস-নুদুস ও বিশালদেহী গরুই। তাই বাজার ধরতেই নানা উপমা আর বাহারি নামে গরু মোটাতাজা করছেন মৌলভীবাজারের খামারিরা। আর জেলায় হাট মাতাতে প্রস্তুত করা হয়েছে বিগ বস, সুলতান, পুষ্পাসহ আরও অনেক বিশাল আকৃতির গরু। এরইমধ্যে অনেক খামারে আগাম বেচাবিক্রিও শুরু হয়ে গেছে।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর বাজার এলাকার পিকে খামারে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ ঘাস আর পানি খাইয়ে একদম প্রাকৃতিক পরিবেশে পরম আদরযত্নে লালন-পালন করা হচ্ছে বিগ বস, সুলতান ও পুষ্পা নামে বিশল আকৃতির একেকটি গরু।
এ সময় খামারের পরিচালক ফরিদ আহমদ এবং খামার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মো. নয়নের সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। তারা জানান, মূলত কোরবানির বাজার ধরতেই অনেক আগে থেকেই খামারে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। তাদের এ খামারে যাতে কোনো রকমের সমস্যা না হয়, সেজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ সবসময় খোঁজ খবর নিচ্ছে।
এ বছরও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহায়তায় তাদের এ খামার পরিচালিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ৭০টি গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে একেকটি গরুকে নানা নামে নানা উপমায় ডাকা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কোরবানিতে ভালো ব্যবসা হবে।
খামারের পরিচালক ফরিদ আরও জানান, তিন বছর থেকে বিদেশি প্রজাতির একটি ষাঁড়ের বাচ্চাকে লালনপালন করে এখন তা কোরবানিতে বিক্রির উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। আদর করে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘বিগ বস’। এটি সাধারণত প্রাকৃতিক খাবার খেতে পছন্দ করে; যার কারণে দানাদার খাবার না দিয়ে ঘাস খেতে দেয়া হয়। এটির ওজন ৮ মণের কাছাকাছি। এরইমধ্যে দামও হাঁকা হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এখনও বিক্রি করা হয়নি। হরিণ রঙের ‘সুলতান’ নামে আরেকটি বিশাল আকৃতির শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় রয়েছে। তার চালচলনে রাজা-বাদশাহি স্বভাব। এতে করে তার নাম রাখা হয়েছে সুলতান।
এ বিষয়ে খামার দেখভালের দায়িত্বে থাকা মো. নয়ন জানান, ষাঁড় সুলতানের ওজন প্রায় সাড়ে ৬ মণের মতো। ৬ লাখের কিছু বেশি দাম উঠেছে। আরেকটু বেশি হলে বিক্রি করে দেবেন। গাঢ় কালো রঙের মায়াবি চেহারার আরেকটি বিদেশি প্রজাতির ষাঁড় রয়েছে। যার নাম রাখা হয়ে ভারতীয় হিন্দি ফিল্মের নায়ক ‘পুষ্পা’ নামে। এ রকম একাধিক গবাদিপশু রয়েছে পিকে খামারে।
ঈদের আগেই বেচাকেনা শুরু
জানা যায়, ঈদের আগেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত কামালপুর বাজার এলাকার পিকে খামার থেকে চারটি গরু ১৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে দেখতে আসছেন; দাম করছেন; ঘুরে দেখছেন।
খামার পরিদর্শন করতে আসা মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনূর হক জানান, প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলায় দিনকে দিন বাড়ছে কোরবানির পশুর চাহিদা। সেইসঙ্গে বেড়েছে এর সংখ্যা। জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে সাড়ে ৫০০ খামার রয়েছে। চাহিদার কথা ভেবে দেশি ও বিদেশি জাতের ছোট-বড় গরু রয়েছে এসব খামারে।
প্রতিটি খামারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে, যাতে করে কেউ অসৎভাবে গরু মোটাতাজা করতে না পারে বলে জানান ওই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান জানান, চাহিদামতো জেলায় ৯৬ হাজার ৭২৮টি গবাদিপশু লালনপালন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বছর বাইরের দেশ থেকে কোনো পশু না ঢুকলে খামারিরা ভালো দামে গবাদিপশু বিক্রি করতে পারবেন।
এ জাতীয় আরো খবর..