রোজার ঈদে বড় পর্দায় ‘রাজকুমার’ হয়ে এসেছেন শাকিব খান। আসল রাজকুমার কিন্তু পাশের শিশুটি। পর্দায় শাকিবের ছোট বেলার চরিত্রে অভিনয় করা শিশুটির নামই যে রাজকুমার। ছোট্ট এই রাজকুমারের গল্প বলছেন হৃদয় সাহা।
নিজের সন্তান, সংসার সব ফেলে এক কাপড়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে মা। পেছন থেকে সেদিকে তাকিয়ে মায়ের জন্য অঝোরে কাঁদছে কোলের শিশুটি, যার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে বাবা। ছোট্ট সেই শিশুর কান্না দেখে সিনেমা হলে দর্শকের চোখ ভিজে উঠেছিল। হিমেল আশরাফের ঈদের ছবি ‘রাজকুমার’-এর এই দৃশ্যের ওপর ভর করেই সাজানো হয়েছে পুরো চিত্রনাট্য।
বড় রাজকুমার শাকিব খানের অভিনয় তো দর্শকনন্দিত হয়েছেই, স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতে মন জয় করে নিয়েছে শিশু রাজকুমারও। কাকতালীয়ভাবে এই শিশুটির নাম রাজকুমার।
বয়স দুই না পেরোতেই সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছে রাজকুমার। কে এই শিশু? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চলচ্চিত্রটির প্রডাকশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু জাফর অপুর ছেলে এই রাজকুমার।
অপু এর আগে ‘রাবেয়া’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘জিরো ডিগ্রি’র মতো ছবির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাঝেমধ্যে পাশাপাশি দু-একটি দৃশ্যে অভিনয়ও করেন। এমনকি ‘রাজকুমার’ ছবিতেও আছেন, আরশ খানের সহকারী ভৃত্যের চরিত্রে।
নিজের ছেলে রাজকুমারের অভিনয় প্রসঙ্গে অপু বলেন, “ছবিটিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই শুনেছি হিমেল আশরাফ ভাই একটি শিশু খুঁজছেন। ভাবলাম আমার ছেলের নামও তো রাজকুমার, কৌতূহলী হয়ে অডিশনে ওর নাম দিই।
অডিশনে প্রায় এক’শ শিশু এসেছিল। হিমেল ভাই আমার ছেলেকেই নির্বাচন করলেন। এভাবেই ‘রাজকুমার’ হলো আমার রাজকুমার।”
ছোট্ট এই রাজকুমারকে নির্বাচন করার ব্যাখ্যা দিলেন হিমেল আশরাফ। বলেন, ‘শাকিব খান সুদর্শন, তার ছোটবেলার চরিত্রের জন্য দেখতে সুন্দর একটা ছেলে প্রয়োজন ছিল। এমন বয়সী শিশু লাগবে, বড় হওয়ার পর যার ছোটবেলার কোনো স্মৃতি মনে থাকবে না। অডিশন নিতে গিয়েই জানতে পারি ছেলেটির নাম রাজকুমার, তাই তার প্রতি আলাদা আগ্রহ ছিল। দেখতেও সুন্দর, শাকিব ভাইয়ের চেহারার সঙ্গে মিল পেয়েছি। সে জন্য তাকেই নির্বাচন করি। তখনই জানতে পারি আমাদের প্রডাকশন ম্যানেজার অপু ভাইয়ের ছেলে ও।’
শিশুদের দিয়ে ঠিকঠাক অভিনয় করানোটা বেশ কঠিন একটা কাজ। কাজটা বেশ কৌশলে করলেন হিমেল। ইউনিটের সবাই রাজকুমারকে সঙ্গ দিয়েছিল, যাতে সে সহজ হতে পারে। বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী নিয়ে তাকে খুশি রাখা হয়েছিল। তবে কান্নার দৃশ্যের সময় কঠোর ছিলেন হিমেল আশরাফ। কান্না যেন সত্যিকার অর্থেই ভেতর থেকে আসে তা নিয়ে সতর্ক ছিলেন। ওই সময় রাজকুমারের বাবা অপুকে সামনে থেকে সরিয়ে দেন হিমেল। তাতে বেশ কাজ হয়। কান্নার দৃশ্য চূড়ান্ত করতে তিন-চারবার শট নিতে হয়েছিল রাজকুমারকে। ছবিতে রাজকুমারের বাবা হয়েছেন অভিনেতা আরশ খান। চরিত্রের প্রয়োজনে আরশকে বেশ কঠোর হতে হয়েছিল। আরশ বলেন, ‘ওই সময় নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছিল। একটা শিশুর কান্না আমার কঠিন হৃদয় ভেদ করতে পারছে না, গল্পের প্রয়োজনে তাকে কাঁদাতেই হবে। তার হাত শক্ত করে ধরেছিলাম। তবে ছোট রাজকুমারের সঙ্গে আমার দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এমনিতেই শিশুরা আমাকে ভালো পায়।’
শুটিংয়ে রাজকুমারের কান্না সহ্য করতে পারেননি তার আসল মা সাবরিনা জাফর রিনা। তিনি ছেলেকে নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন, তাঁকে বোঝান তাঁর স্বামী। কিন্তু কেমন ছিল পর্দার মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক। পর্দায় রাজকুমারের মা হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। মাহির সঙ্গে রাজকুমারের রসায়ন নিয়ে অপু বলেন, ‘মাহি আপু আমার ছেলেকে শুরুতেই আপন করে নিয়েছিলেন। শুটিংয়ে তিনিই সারাক্ষণ আগলে রেখেছেন। যেন তিনি সত্যিই মা।’
ডাবিংয়ের সময় হলো মজার কাণ্ড! পর্দায় নিজের কান্না দেখে ফের কাঁদল রাজকুমার, তাতেই পরিচালকের কাজ হয়ে গেল। বাড়তি কিছু করতে হয়নি।
‘রাজকুমার’ কেমন উপভোগ করেছে রাজকুমারের পরিবার? অপু বলেন, ‘আমাদের পরিবারে তো রীতিমতো উৎসব লেগে গিয়েছিল। আমার মা দিয়েছিলেন রাজকুমার নামটা। দাদির দুই চোখের মণি রাজকুমার। আমার মা তাঁর বোনদের ঢাকায় ছবি দেখার আমন্ত্রণ জানান। আমি এ পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজনের মোট ৪০ জনকে ছবিটি হলে দেখিয়েছি, সবাই ভীষণ খুশি।’
জাতীয় পুরস্কারে সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার পেতে পারে রাজকুমার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কথা বলছেন অনেকেই। অপু এর পুরো কৃতিত্ব দিতে চান হিমেলকে। রাজকুমারের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন স্বয়ং শাকিব খান, তবে এখনো সরাসরি দেখা হয়নি দুই রাজকুমারের। অপু জানালেন, অভিনয়ের অনেক অফার আসছে রাজকুমারের, নিজের ব্যস্ততা কমলে ছেলের অভিনয়ের বিষয়ে কথা বলবেন।
এ জাতীয় আরো খবর..