ছাঁটাই করায় নষ্ট হচ্ছে ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ ও বিক্রয়মূল্য সংবলিত চালের বস্তা বাজারে আসবে। আর আগামী ছয় মাসের মধ্যে চাল ছাঁটাই করা বন্ধ করা হবে। এর পরও কেউ যদি চাল ছাঁটাই করে চিকন করে, তবে তাদের মেশিন জব্দ করা হবে।
রাজধানীর শাহবাগে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ‘খাদ্যবাহিত রোগ ও স্বাস্থ্য বিপত্তি নিরসনে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বিএফএসএ।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চকচকে চাল খাওয়ার ফলে আমাদের জাতীয় ক্ষতি হচ্ছে। এই চকচকে চাল খেতে গিয়ে শুধু পলিশ করার কারণে ১৬ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল নষ্ট হয়। চাল পলিশ করার সময় স্যালাইন পানি বা মেডিসিন ব্যবহার করা হয়।
আমরা আইন করেছি, মিনিকেট চাল থাকবে না। পহেলা বৈশাখ থেকে সেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চালের বস্তার গায়ে ধানের জাতের নাম, উৎপাদনের তারিখ ও দাম উল্লেখ করতে হবে। বাজারে এখনো এই চাল পুরোপুরি আসেনি, তবে আসতে শুরু করেছে।
এখনো বাজারে পুরনো চাল আছে। সেগুলো শেষ হওয়ার পর আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন বস্তার চাল ছাড়া অন্য চাল পাওয়া যাবে না। যে আইন করা হয়েছে, আগামী দুই, চার বা ছয় মাস পর আর পলিশ করা চাল উৎপাদন করা যাবে না। এর পরও যারা পলিশ করবে, আমরা তাদের মেশিন জব্দ করব। কষ্ট লাগে, চালের পুষ্টি ছাঁটাই করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
ভোক্তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘ভোক্তাদের অভ্যাসে দোষ আছে। একমাত্র বাংলাদেশে চালের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ছাড়া অন্য পুষ্টি উপাদান নেই। আমরা যদি আইন করে দিই পলিশ করা চকচকে চাল খাবেন না, কেউ মানবেন? মানবেন না। বাড়িতে জাফরান রং দিয়ে জর্দা, বিরিয়ানি বানান। বিয়েবাড়ির খাবারও জাফরান রং দিয়ে বানান। খুব সুন্দর করে সেজেগুজে গিয়ে সেগুলো আমরা তৃপ্তি করে খাই। আর এভাবে ক্যান্সারের বীজ শরীরে নিয়ে নিই। অনেকে রঙিন আইসক্রিম কিনে খায়। এ জন্য ভোক্তারা যদি নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন না করে, তাহলে আইন করে কিছু হবে না।’
অনুষ্ঠানে খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত তেল ব্যবহার, অতিরিক্ত তাপে রান্না করে আমরা কখনো কখনো খাদ্যকে অখাদ্য বানিয়ে ফেলি। এ জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই খাদ্য নিরাপদ করা সম্ভব হবে।’
সেমিনার শুরুর আগে ‘বিএফএসএর সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় সাতটি মোবাইল ল্যাবের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী, যেগুলোর মধ্যে একটি রাজধানীতে, অন্য ছয়টি বিভাগীয় পর্যায়ে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করবে। গাড়িতে স্থাপন করা মোবাইল ল্যাবগুলো চীন থেকে আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ভ্রাম্যমাণ এসব ল্যাবের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক খাদ্যে ভেজাল শনাক্ত ও দূষণ রোধ করা যাবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া, সদস্য আবু নূর মো. শামসুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেন্টিভ ও সোশ্যাল মেডিসিনের ডিন ডা. মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এ জাতীয় আরো খবর..