×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-০৮
  • ২৭৬ বার পঠিত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় বহুমাত্রিক। তিনি একই সঙ্গে কবি, সংগীতজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য ১৯১৩ সালে তাঁকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। বাঙালি হিসেবে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করেন।

জন্মস্থান ও কর্মজীবন মূলত পশ্চিমবঙ্গে হলেও পূর্ব বাংলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। পৈতৃক জমিদারির কাজে এসে পূর্ব বাংলা ও এর সাধারণ মানুষকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। গীতাঞ্জলি এবং তাঁর আরো অনেক বিখ্যাত রচনার সৃষ্টি বর্তমান বাংলাদেশের মাটিতেই। কাজের অবসরে পূর্ব বাংলার পদ্মা নদীতে ‘পদ্মা’ নামেরই বজরা নৌকায় ভেসে গ্রামবাংলার সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি লেখনী চালিয়েছেন কবি।
রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী ছিলেন খুলনার মেয়ে।
আজ বুধবার ২৫শে বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ (১৮৬১ সালের ৭ মে) কলকাতার জোড়াসাঁকো এলাকার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে তাঁর জন্ম।

তাঁর বিপুল রচনাসম্ভার বিশ্বসাহিত্যেরই এক অমূল্য সংযোজন। বাঙালির জীবনের অনেকটা জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। জাতীয় সংকট ও ব্যক্তির বিপন্নতার পাশাপাশি উৎসবে তাঁর সৃষ্টিকর্মের শরণাপন্ন হয় বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের দীর্ঘ পথে রবীন্দ্রনাথের রচনা ছিল অনুপ্রেরণা। তাঁর জন্মদিন তাই এক উদযাপনের উপলক্ষ বটে।

উৎসবের আমেজে বাঙালি তা উদযাপনও করে থাকে।
অবাঙালি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের আমলে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ১৯৬১ সালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বাধা এসেছিল। কিন্তু স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠায় উন্মুখ অদম্য বাঙালি সব বাধা ঠেলে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন তো করেই, এ ভূখণ্ডে রবীন্দ্রচর্চা দিনে দিনে আরো বেড়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরশাসন ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মকে আশ্রয় করেছে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনায় রবীন্দ্রনাথ পূর্ণ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হন। আজ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে পালন করা হয় রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী। সাম্প্রদায়িক চেতনার একটি ক্ষুদ্র কিন্তু সক্রিয় শ্রেণি নানা ধুয়া তুলে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির জন্য অবশ্য নতুন করে তৎপর।

বিশ্বদরবারে বাংলা সাহিত্যকে মর্যাদার আসনে বসানো এই সাহিত্যসাধকের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সোনার বাংলার স্বপ্ন ও বাস্তবতা : রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লিখেছিলেন বাংলা প্রদেশকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বিভক্ত করার উদ্যোগ বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে। গানটির সুর তিনি নিয়েছিলেন শিলাইদহের বাউল গগন হরকরার কাছ থেকে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শিল্পী জাহিদুর রহিমের কণ্ঠে গানটি শুনতে বিশেষ পছন্দ করতেন। শেষ পর্যন্ত এই গানকেই করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। বঙ্গবন্ধু ‘সোনার বাংলা’ শব্দবন্ধটি তুলে নিয়েছিলেন এই গান থেকেই। বাংলার মায়াভরা সৌন্দর্যের কাব্যিক, হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা আছে এই গানে। স্বাধীনতার আগে তিনি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’ বলে। আজ এসব প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনা করবেন বিশেষজ্ঞ, জ্ঞানী-গুণীজন। বিবিসির জরিপে সর্বকালের দুই শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ মানুষের মধ্যে প্রীতি, বিবেক ও মানবতাবোধকে জাগানোর কথা বলেছেন। সব মানবিক আবেগ, অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষার অতুলনীয় প্রকাশ ঘটেছে তাঁর রচনায়।

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করবে দেশের মানুষ। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। এবার জাতীয়ভাবে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। মূল অনুষ্ঠান হবে রাজধানীতে। সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমিতে আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এতে সভাপতিত্ব করবেন। স্মারক বক্তব্য দেবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। আলোচনাপর্বের পরে থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

বাংলা একাডেমি আজ একক বত্তৃদ্ধতা, রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লাইসা আহমদ লিসাকে রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ তুলে দেওয়া হবে।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট দুই দিনের রবীন্দ্র উৎসবের আয়োজন করেছে। আজ ও আগামীকাল ছায়ানট মিলনায়তনে হবে এর অনুষ্ঠান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা জানিয়েছেন, দুই দিনের এই উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক সংগীত, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। সবার জন্য উন্মুক্ত এ অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নেবে।

এ ছাড়া রাজধানীর বাইরে রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে, খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন রবীন্দ্র মেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat